Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 5:03 am

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ঠিকাদার নিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ঠিকাদার নিয়োগ, ১০ লাখ বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্রয় ও ৫০ হাজার টন চিনি আমদানিসহ মোট ১৩টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ‘সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকশেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণের জন্য জি-টু-জি ভিত্তিতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ‘চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন’কে (সিএমসি) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে চার লেনের ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়কও নির্মিত হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১২ হাজার ৫৬৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ২০২২ সালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে সেতু বিভাগ। প্রকল্প নির্মাণ-পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য এটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে সিএমসি।

১০ লাখ বৈদ্যুতিক খুঁটি, ১৫টি সাবস্টেশন ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয়: প্রায় ১০ লাখ বৈদ্যুতিক খুঁটি (এসপিসি পোল) ক্রয় করছে সরকার। পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় এসব খুঁটি ক্রয় করবে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। ক্রয় কমিটির বৈঠকে এজন্য পৃথক পাঁচটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে প্রায় এক হাজার ৯০৩ কোটি টাকা।

অতিরিক্ত সচিব জানান, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে পল্লী বিদ্যুতায়নের বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে প্যাকেজ ‘ডিএনইএস (ই)-জি-০৭’-এর আওতায় দুই লাখ ৭১ হাজার ৯৫৪টি এবং বোর্ডের বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতা বর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণে প্যাকেজ ‘ইউআরআইডিএস (ই)-জি-১৩’-এর আওতায় দুই লাখ ৩৪ হাজার ২৪১টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্রয় করা হবে।

অবশিষ্ট তিনটি প্যাকেজের মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতা বর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণে প্যাকেজ ‘ইউআরআইডিএস (ডবিøউ)-জি-১৩’-এর আওতায় দুই লাখ ১৫ হাজার ৭০৭টি এবং পল্লী বিদ্যুতায়নের বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে প্যাকেজ ‘ডিএনই (ডবিøউ)-জি-০৭’-এর আওতায় দুই লাখ ৫৬ হাজার ২৩৭টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্রয় করা হবে।

পঞ্চম প্যাকেজে সিলেট বিভাগের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৫ মিটার দীর্ঘ ১৮ হাজার ৭২০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্রয় করা হবে।

এর বাইরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আরও চারটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর মধ্যে রয়েছেÑপল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণে ‘রাজশাহী-রংপুর বিভাগীয় কার্যক্রম-২ (সংশোধিত)’-এর আওতায় টার্ন-কি ভিত্তিতে ১২টি ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন (প্যাকেজ নং বিআরডিপি-০২-এসএসএন-০১) নির্মাণ এবং ‘চট্টগ্রাম-সিলেট বিভাগীয় কার্যক্রম-২’-এর আওতায় তিনটি ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন (লট নং সিএসডিপি-০২-এসএসএন-০১-০৫/০১) নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

অপর দুটি প্রস্তাবের মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে পল্লী বিদ্যুতায়নের বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে প্যাকেজ নং ‘ডিএনই(ডবিøউ)-জি-০৩’-এর আওতায় ৬৬ হাজার ৪৯৬ কিলোমিটার কন্ডাক্টর কেবল্ ও ওয়ার (বেয়ার ও ইন্স্যুলেটেড) ক্রয় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতা বর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণে প্যাকেজ ‘ইউআরআইডিএস (ই)-জি-০২’-এর আওতায় কন্ডাক্টর ক্রয় করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৭৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

৫০ হাজার টন চিনি আমদানি: বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ঘাটতি মেটাতে ৫০ হাজার টন চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এ চিনি আমদানি করা হবে।  প্রতি  টন ৪৬৫ দশমিক ২৭ ডলার হিসেবে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স এগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেডের সহায়তায় মেসার্স গ্লোবোপিউ ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট লিমিটেড এ চিনি সরবরাহ করবে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৩ কোটি ২৭ লাখ ১০ হাজার ১৫০ টাকা।

বিএসএফআইসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৫৬৬ মেট্রিক টন চিনি মজুদ রয়েছে। চলতি বছরের অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে আখ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে বিএসএফআইসি। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে চিনির দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করতে পারেন। আর এজন্য বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগেভাগেই চিনি আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অতিরিক্ত সচিব জানান।

এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে বাগেরহাট জেলার ৮৩টি নদী/খালের প্রায় ৩১০ কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং ও পুনঃখননের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এ কাজটি পেয়েছে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী। এতে ব্যয় হবে ৫৩১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন (জাইকা এল/এ নং বিডি-পি৭৬) অংশের ডিটেইলড ডিজাইন ও নির্মাণকাজের তদারকিতে পরামর্শক সেবার কাজে বাদ পড়া অংশের সংযোজন (এডেনডাম-১) প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। প্রকল্পের অতিরিক্ত পাঁচ কোটি ৪৭ লাখ টাকার কাজ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পে মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

এদিকে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভ‚মি উন্নয়ন কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ২১৮ কোটি টাকা।

এছাড়া যমুনা নদীর ভাঙন থেকে গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলা রক্ষা; ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষা শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সাড়ে চার কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ ও টার্মিনেশন নির্মাণ, ১০ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্বাসন এবং ১২ দশমিক ২২০ কিলোমিটার নদী খনন বাস্তবায়ন, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল মহাসড়কের ৩৭ কিলোমিটার এলাকার নলকা সেতুর জয়েন্টসহ অন্যান্য কাজ, ধোপাকান্দি সেতুর ফুটপাত ও রেলিং পুনর্নির্মাণ কাজে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি প্রয়োগের অনুমোদনসহ মোট ছয়টি কাজের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।