সোহেল রহমান : দরদাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রস্তাবিত ব্যয় প্রস্তাব কয়েক দফা সংশোধনের পর ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড়া সর্বশেষ ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩৬ কোটি ডলার। চীনা এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে জি-টু-জি ভিত্তিতে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করবে ‘চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন’ (সিএমসি)। এ লক্ষ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চূড়ান্ত বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিতে যাচ্ছে ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’। আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠেয় বৈঠকে এটি অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি প্রথমে ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ (পিপিপি)-এর আওতায় বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্রথম দফায় ‘এক্সপ্রেস অব ইন্টারেস্ট’ (ইওআই) আহ্বানে কোনো সাড়া পাওয়া না গেলেও দ্বিতীয় দফায় সাতটি প্রস্তাব পাওয়া যায়। পরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনা সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়া গেলে চীনা অর্থায়নে এটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চীনা অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনা ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়ে গত বছর ৩০ নভেম্বর গৃহীত সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হচ্ছে ‘চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে সীমিত দরপত্রের মাধ্যমে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হবে। তবে উভয় রাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যেমন- অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বা অন্যান্য বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সীমিত পর্যায়ে প্রয়োজনে ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।’
তবে একইসঙ্গে এ সিদ্ধান্ত অনুমোদনের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন যে, তবে ইতোমধ্যে যেসব প্রকল্প নিয়ে নেগোসিয়েশন চলছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিই অনুসরণ করা হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে (২০১১ সালে) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর ইন্টারসেকশন ও ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা ইন্টারসেকশন পর্যন্ত মোট ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ছয় দশমিক ৩৬ কিলোমিটার র্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে (আগস্ট, ২০১৬) প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই পরীক্ষা ও সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ (২০১৭) অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিশেষজ্ঞদের মতামতের পর প্রকল্পের চূড়ান্ত রূপরেখা দাঁড়িয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া হয়ে ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, তিন দশমিক ৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ র্যাম্প, সাভার থেকে চন্দ্রা অভিমুখী ও চন্দ্রা থেকে আরিচা অভিমুখী দুই লেনবিশিষ্ট দুটি পৃথক ফ্লাইওভার নির্মাণ, ইপিজেড থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা-নামার জন্য ২টি র্যাম্পসহ একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ইউলুপ নির্মাণ, জিরাবো ইন্টারসেকশন-এ ওঠা-নামার জন্য ২টি র্যাম্প ও মিরপুর বেড়িবাঁধ ইন্টারসেকশনে ওঠা-নামার জন্য দুটি র্যাম্প নির্মাণ, বিদ্যমান ১৫ দশমিক আশুলিয়া সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ এবং দুই দশমিক ৭২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি সেতুসহ ড্রেন নির্মাণ।
সম্ভাব্যতা যাচাই পরীক্ষা ও পরে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে প্রকল্পে বিভিন্ন বিষয় সংযোজন ও পরিবর্তনের কারণে দরদাতা চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছ একাধিকবার সংশোধিত দরপস্তাব গ্রহণ এবং একাধিক বৈঠক ও নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে ব্যয় প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানায়।