ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবে ইরানের জয়

শোবিজ ডেস্ক: রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত পঞ্চদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্র, সেরা নির্মাতা ও সেরা অভিনেতা—এই তিন বিভাগের পুরস্কার জিতে এবারের উৎসবের আসর মাত করেছে ইরান।

সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ইরানি নির্মাতা রেজা মিরকারিমের ‘ডটার’। সেরা নির্মাতা পারভেজ সাহবাজি। তার ‘মারালিয়া’ চলচ্চিত্রের জন্য এ পুরস্কার পান তিনি। সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতেন ফরহাদ আসলানি। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ফিলিস্তিনের অভিনেত্রী মাইসা আব্দ এলহাদি।

উৎসবে ৬৭ দেশের ১৮৮টি চলচ্চিত্রের মধ্যে সাতটি বিভাগে মোট ২৫টি পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে চারটি পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশের নির্মাতারা। উৎসবে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘অজ্ঞাতনামা’কে।

সেরা শিশুতোষ চলচ্চিত্র হিসেবে ‘বাদল রহমান পুরস্কার’ পেয়েছে ফিলিপাইনের মারসেইল সি কারিগার ‘পিটং কাবাং পালাই’। দর্শকের বিচারে সেরা চলচ্চিত্র ভারতের ববি সারমা বারুহের ‘সোনার বরণ পাখি’, সেরা ফিচার চলচ্চিত্র আজারবাইজানের মিরবালা সালিমলির ‘কিরমিজি বাগ’। এ বিভাগে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশের নাদের চৌধুরীর ‘লালচর’।

সেরা প্রামাণ্যচিত্র নেদারল্যান্ডসের অ্যানি ক্রিস্টেন তিরারডটের ‘আইল্যান্ডস অফ দ্য মংকস’। এ বিভাগের বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে ইতালির মার্কো জুইনের ‘লা সেদিয়া দে কার্তুনে’।

সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ইরানের আলি মারদোমির ‘দ্য সেমেন্টারি ম্যান’।

স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্র বিভাগে সেরা নির্বাচিত হয়েছে সিরিয়ান পরিচালক আমির আল বারজাইয়ের ‘ইয়ামান’।

বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে দুটি চলচ্চিত্রকে—সিভাপ্রাদ কেভি পরিচালিত ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘আপ্পোপানথাডি’ ও বাংলাদেশের তারেক আজিজ পরিচালিত ‘প্যারালাল জার্নি’।

এছাড়া নারী চলচ্চিত্রকার বিভাগে সেরা প্রামাণ্যচিত্র নির্বাচিত হয়েছে যুদ্ধশিশুদের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘জন্মসাথী’। এটি পরিচালনা করেছেন শবনম ফেরদৌসী।

গত শুক্রবার বিকালে জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সমাপনী বক্তব্যে বাংলা চলচ্চিত্রের বিশ্বায়নে জোর দেন মন্ত্রী। নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।

১২ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত চলা এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেন বাংলাদেশসহ প্রায় ৭০টি দেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

উৎসবের অংশ হিসেবে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর যৌথভাবে আয়োজন করে ‘সপ্তম ঢাকা সিনে ওয়ার্কশপ’। ১৬ দিনব্যাপী এ ওয়ার্কশপে বাংলাদেশসহ আটটি দেশের ২৭ জন তরুণ নির্মাতা অংশ নেন।

এছাড়া গত ১৩-১৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগিতায় নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী ও বিশিষ্ট নারীদের অংশগ্রহণে রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয় ‘চলচ্চিত্রে নারী’ শীর্ষক তৃতীয় ঢাকা আন্তর্জাতিক সম্মেলন।

উৎসবের অংশ হিসেবে ১৫ জানুয়ারি দিনব্যাপী ‘বাংলা সিনেমার বিশ্বযাত্রা’ নিয়েও আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্মেলন। সামিয়া জামানের সঞ্চালনায় সেখানে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালকদের পথ দেখান বিদেশি নির্মাতা ও প্রযোজকরা। আইইএফটিএ’র সভাপতি মার্কোওরসিনি অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে ঘোষণা দেন, এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসবের কর্মশালায় তিনজন তরুণ নির্মাতাকে তিনি অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবেন।

উৎসবে এবারই প্রথমবারের মতো একটি চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ ও শিল্পাঙ্গন আর্ট গ্যালারির যৌথ আয়োজনে গত ৮ জানুয়ারি থেকে এই প্রদর্শনী শুরু হয়ে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে। ইরানি তরুণ চিত্রশিল্পী সারাহ হোজ্জাতির ৩০টি চিত্রকর্ম নিয়ে আয়োজিত এই প্রদর্শনীর নাম ছিল ‘মাই ড্রিম ওয়ার্ল্ড’।