নিজস্ব প্রতিবেদক: তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। আজ শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এ কে আবদুল মোমেন রামনাথ কোবিন্দকে বিদায় জানান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। গত বছর করোনা মহামারি প্রাদুর্ভাবের পর এটাই ভারতের রাষ্ট্রপতির প্রথম বিদেশ সফর। তিনি এই সফরকে সবচেয়ে সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।
এর আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজধানীর রমনা কালী মন্দিরে সংস্কার অংশের উদ্বোধন ও এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এসময় তিনি বলেন, একজন ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা করা আনন্দ ও সম্মানের। পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণের উষ্ণতা ও ভালোবাসা আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়েছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রামনাথ কোবিন্দ আরও বলেন, আমরা যৌথভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করছি। স্বাধীনতা অর্জনে বাংলাদেশের জনগণের বিপুল ত্যাগের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই।
ভারতীয়দের হৃদয়ে বাংলাদেশের বিশেষ স্থান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের রয়েছে আত্মীয়তা, ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রাচীন বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে রচিত এক অনন্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আমাদের সম্পর্ক দুই দেশের বিচক্ষণ নেতৃত্বের দ্বারা লালিত হচ্ছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সশস্ত্র সংগ্রামের কথাগুলো আমার মনে পড়ছিল। আমি শ্রদ্ধা জানাই সেই সব নারীদের প্রতি, যাদের মর্যাদা লঙ্ঘন করা হয়েছিল, অসহায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে রামনাথ কোবিন্দ বলেন, আজ বাংলাদেশ এই অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের জনগণের লড়াই ন্যায়সঙ্গত ছিল। এই লড়াই ছিল মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য।
মুক্তিযুদ্ধের পর, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বড় ধরনের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যেতে এবং বৃহত্তর সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান তিনি।
ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি প্রগতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, গণতান্ত্রিক ও সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজে বাংলাদেশের মৌলিক মূল্যবোধ বজায় রাখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম প্রধান অবদান।
তিনি আরও বলেন, ভারত এমন একটি বাংলাদেশকে সমর্থন করবে, যা এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে আবির্ভূত মূল্যবোধগুলোকে তুলে ধরে।
বাংলাদেশের মানুষের সদিচ্ছা এবং বন্ধুত্বকে ভারত মূল্যায়ন করে বলে জানান রামনাথ কোবিন্দ।
বিজয়ের শতবর্ষ, মুজিবর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে গত বুধবার ঢাকা সফরে আসেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। বিমানবন্দরে নেমেই সেখান থেকে হেলিকপ্টার করে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। সাভার থেকে ফিরে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে দেখেন তিনি।
সফরের প্রথম দিন বিকালে সোনারগাঁও হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন কোবিন্দ। পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং নৈশ ভোজে অংশ নেন।
পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে শেরেবাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড ময়দানে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অংশ নেন কোবিন্দ। বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নেন কোবিন্দ।
রাষ্ট্রীয় এ সফরে ভারতের ফার্স্ট লেডি এবং রাষ্ট্রপতির কন্যা, ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, একজন সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তার সঙ্গী হিসেবে ছিলেন।