আবদুল হাকিম আবির: শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সেশনজট রোধ করার লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রাজধানীর সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সাত কলেজের সিলেবাস প্রণয়ন এবং পরীক্ষা গ্রহণসহ যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম তদারকি করবে। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে মাস্টার্স পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়েছে অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ৩ এপ্রিল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত এই রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশ নেবে নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের জন্য আলাদা রুটিন প্রকাশ করবে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা।
ইডেন মহিলা কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শাহনাজ সুলতানা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তকরণের ফলে আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে এখন যে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হচ্ছে তাতে আমরা পুনরায় সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছি। তিনি দাবি করেন, অন্যান্য বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই মাস্টার্স পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে যেত। এবার অধিভুক্তকরণ জটিলতায় এ পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেও এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের অবহিত না করেই এ সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ায় আমরা তাদের পরীক্ষা নিতে পারছি না। বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
অধিভুক্ত নতুন কলেজগুলো হচ্ছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এক লাখ ৬৭ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী এবং এক হাজার ১৪৯ জন শিক্ষক রয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন অধিভুক্ত সাতটি কলেজসহ এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান ১১১টি। পূর্বে অধিভুক্ত ১০৪টি প্রতিষ্ঠানের মতোই এ কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম তদারকি করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আসন্ন পরীক্ষাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে উল্লেখ করেন। তবে শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।
কলেজগুলোকে অধিভুক্তকরণ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে, অধিভুক্ত কলেজগুলোর পরবর্তী সব পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। যেসব শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষা দিয়েছেন তাদের সাক্ষাৎকারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হবে। এছাড়া যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণ করেছেন, তাদেরও নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পুনরায় ফরম পূরণ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে নতুন করে ফি জমা দেওয়া লাগবে না।
এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন মোল্লাহ বলেন, অধিভুক্ত হওয়ায় এখন এসব কলেজের পরীক্ষা গ্রহণের সুযোগ আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে নেই। দেরি হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের পরীক্ষা নেবে। এতে তাদের শিক্ষার মানও বাড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে স্নাতক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোয় পড়ছেন। এগুলোতে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ২১ লাখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এ সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সাফল্যের ওপর ভর করে দেশের বাকি কলেজগুলোকেও পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, পরীক্ষা গ্রহণ জটিলতার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। নতুন অধিভুক্তির কারণে কিছু সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হবে। তবে শিগগিরই আন্তঃবিভাগীয় সভার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। আর এতে সেশনজটের আশঙ্কাও নেই।