ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি অধ্যায়। আগামী ৪ মার্চ হতে যাচ্ছে ৫০তম সমাবর্তন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এ পর্যন্ত আয়োজিত সমাবর্তনগুলোর খুঁটিনাটি জানাচ্ছেন এহসান আবদুল্লাহ
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন। প্রতিটি সমাবর্তনেই থাকে নানা চমক। আয়োজন, অতিথি বাছাইÑ সব খানেই থাকে নতুনত্ব। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। কানাডার ওয়েস্টার্ন ওন্টারিও ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. অমিত চাকমা প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ২০১৫ সাল থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব শিক্ষার্থীর ফল প্রকাশ হবে, তারাই অংশ নিতে পারবেন।
৫০তম সমাবর্তন ছাত্রছাত্রীদের মাঝে নিয়ে এসেছে উৎসবের নতুন উপলক্ষ। ইতোমধ্যে সমাবর্তন গাউন ও ক্যাপ সংগ্রহ করার পাট চুকিয়ে ফেলেছেন প্রায় সবাই। সমাবর্তনকে ঘিরে নানা স্বপ্নের আঁকিবুঁকি রয়েছে। সেই প্রথম বর্ষ থেকে অপেক্ষার প্রহর ফুরোয় না বললেই চলে।
এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমাবর্তনে উপস্থিত হয়েছেন বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. ফ্রান্সিস গ্যারি, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেন, ড. মাহাথির মোহাম্মদ, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অধ্যাপক ইউয়ান টি লি, বিজ্ঞানী অধ্যাপক আবুল হুসসাম ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক রণজিত গুহ, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মহাসচিব প্যাসকেল ল্যামি ও ইউনেসকোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকাভো প্রমুখ।
১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। বাংলার তৎকালীন গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড লিটন সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন। এরপর ১৯২৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ শাসনামলের সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালের ২১ নভেম্বর। ব্রিটিশ শাসনামলে মোট ২৪ বার সমাবর্তন হয়েছে। এরপর ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ মার্চের সেই সমাবর্তনে কার্জন হলে পাকিস্তানের গভর্নর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি নাকচ করে দিয়ে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার প্রতিবাদে সমাবর্তন স্থলেই ছাত্ররা ‘নো, নো’ বলে প্রতিবাদ করতে থাকেÑ ভাষা আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠে। পরবর্তী সময়ে ১৯৫২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সমাবর্তনের তারিখ ঠিক করা হয়। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার শহীদ হলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠে। ফলে সে বছর ১৭ ডিসেম্বর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৪ সালের সমাবর্তন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক অরাজকতাপূর্ণ সমাবর্তন। তৎকালীন চ্যান্সেলর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আবদুল মোনায়েম খান ও ভিসি ছিলেন অধ্যাপক ড. এম ওসমান গনিÑ দুজনই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। ছাত্রছাত্রীরা গভর্নর মোনায়েম খানের কাছ থেকে ডিগ্রি নিতে অস্বীকার করলে তা আর সফল হয়নি। পাকিস্তান আমলে শেষ সমাবর্তন হয় ১৯৭০ সালে ৮ মার্চ। সেটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম সমাবর্তন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান আমলে মোট ১৫ বার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাবর্তন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু ভোররাতে সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিহত হওয়ায় সে সমাবর্তন বাতিল করা হয়।
এর ২৯ বছর পর স্বাধীন বংলাদেশে প্রথম সমাবর্তন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর। তারপর ২০০১, ২০০৪, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১২ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বৃহত্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের মার্চ মাসে (৪৭তম), সমাবর্তনে বক্তা ছিলেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের মহাসচিব প্যাসকেল ল্যামি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। সমাবর্তনের প্রধান বক্তা ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ৪৯তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তা ছিলেন জেনেভাভিত্তিক মেধাস্বত্ব সংগঠন ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) মহাপরিচালক ফ্রান্সিস গ্যারি।
Add Comment