ঢাকা ব্যাংকে খেলাপি সাদ মুসা গ্রুপের এম এ রহমান ডাইং

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পোশাক খাতের শিল্প গ্রুপ সাদ মুসা। ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মহসিন সাদ মুসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি রপ্তানির জন্য একাধিকবার সিআইপি খেতাবপ্রাপ্ত হন। এরপর সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে আরও এগিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ছন্দপতন হয় ব্যবসায়। অনিয়ন্ত্রিত ও মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ, অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত. ফান্ড ব্যবস্থাপনার অভাব, করপোরেট সংস্কৃতি চর্চার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ডুবেছে সাদ মুসার ব্যবসা। এর মধ্যে এ গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান খেলাপি হয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে। গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এম এ রহমান ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবার খেলাপি হয়েছে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডে। ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৭৪ কোটি টাকা।

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের পোশাক খাতের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মহসিন পোশাক খাতের একাধিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে তুলেন সাদ মুসা গ্রুপ। এ গ্রুপের এম এ রহমান ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ ঢাকা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেয়। প্রথমদিকে নিয়মিত ঋণ থাকলেও পরে অনিয়মিত ঋণে পরিণত হয়। একপর্যায়ে খেলাপি পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৪ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৬০৩ টাকায়। এ পাওনা পরিশোধে গত এক বছরে বেশ কয়েকবার তাগাদা দিলেও প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা একাধিকবার ব্যর্থ হন। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খেলাপি পাওনা আদায়ে ঋণের বিপরীতে বায়েজিদ থানার কুলগাঁও মৌজায় এক দশমিক ৬৮ একর জমি, কারখানা ও স্থাপনাসহ বন্ধকীতে থাকা সম্পত্তি নিলামে বিক্রয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। এ নিলাম কার্যক্রম আগামী ৩ এপ্রিল ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে আগ্রহী ক্রেতারা উপস্থিত থাকতে পারবেন।

অপরদিকে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, এম এ রহমান ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের সিডিএ এভিনিউ শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেয়। প্রথমদিকে নিয়মিত ঋণ থাকলেও পরে অনিয়মিত ঋণে পরিণত হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭১ কোটি ৭৮ লাখ ২৫ লাখ ১৯৬ টাকা। এ পাওনা পরিশোধে ব্যর্থতায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা করে।

সাদ মুসা গ্রুপ ও ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে গ্রুপটির কাছে ন্যাশনাল ব্যাংকের পাওনা ৭৮০ কোটি টাকা, স্ট্যার্ডাড ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংকের ৪১৮ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৩৭৮ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্টে ২৪৬ কোটি টাকা, সাইথইস্ট ব্যাংকে ৫২০ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংকে ৩৭১ কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংকে ১১০ কোটি টাকা, এরআরবিসি ব্যাংকে ১৭৫ কোটি টাকা, উত্তরা ব্যাংকে ৭৮ কোটি টাকা, উত্তরা ফিন্স্যাসে ৮০ কোটি টাকা ও বিডি ফাইন্স্যাস লিমিটেড ৪৯ কোটি টাকা। এছাড়া ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশনেও বড় অঙ্কের পাওনা বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ব্যাংক পাওনা আদায় নিয়ে চিন্তিত। শুধু তা-ই নয়, এ ব্যবসায়ীকে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের পরিচালকের পদ ছাড়তে হয়েছে। এছাড়া কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার, কর ফাঁকি ও

আয়কর রিটার্নে বিদেশে বিনিয়োগের তথ্য গোপনের অভিযোগও ছিল। দেশের শীর্ষ খেলাপির তালিকায়ও নাম উঠেছে সাদ-মুসা গ্রুপের।

খেলাপি ঋণ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক হাসান মাহমুদ শেয়ার বিজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক আইন অনুসারে সাদ মুসা গ্রুপের এম এ রহমান ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড খেলাপি হয়েছে। তাদের কাছে খেলাপি পাওনার পরিমাণ ৭৪ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলা করা হয়েছে। তবে মহসিন সাহেব ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য আবেদন করলেও প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট দেননি। তিনি বিদেশি ফান্ড এনে লোন শোধ করবেন-এমন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি জুনের মধ্যে সব ব্যাংকের লোকজনদের সঙ্গে বসে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করবেন বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সাদ মুসার সব প্রতিষ্ঠান আংশিকভাবে চালু রয়েছে, যা দিয়ে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধের সম্ভাবনা খুবই কম। বিষয়গুলো নিয়ে সব ব্যাংক চিন্তিত।

ঋণ খেলাপি বিষয়ে সাদ মুসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহসিনের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তাৎক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও সম্প্রতি প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি শেয়ার বিজকে বলেছিলেন, ‘এখন অনেক চাপে আছি। নানা জটিলতার মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করছি। চেষ্টা করছি ব্যাংকগুলোর ঋণ পরিশোধে। এখন শ্রমিকদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ ৩৭ বছরের ব্যবসায় আমার কোনো দুর্নাম ছিল না। গত কয়েক

বছরের তিনশর মতো কারখানা বন্ধ হয়েছে। আমরা অনেক কষ্ট করে প্রতিষ্ঠান চালু রেখেছি। চেষ্টা করছি ভালো করার জন্য। দেখা যাক কী হয়।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০