ইসমাইল আলী: ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন উদ্বোধন করা হয় গত ১২ মার্চ। এটি নির্মাণে দুটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যার একটি এখনও চলমান। তবে উদ্বোধনের ৯ মাস পেরুলেও শেষ হয়নি মহাসড়কটির বিভিন্ন অংশের নির্মাণকাজ। এর মধ্যে প্রকল্পটিতে নতুন আরও কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে। এজন্য প্রকল্পটি সংশোধন করতে হবে। অন্যথায় নিতে হবে নতুন প্রকল্প। এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়।
গতকাল প্রকল্পটির পর্যালোচনা সভায় এসব বিষয় উঠে আসে। এতে জানানো হয়, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন নির্মাণে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পে দুটি প্যাকেজ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজের (ঢাকা-মাওয়া) অনুমোদিত ব্যয় দুই হাজার ৭৪১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আর দ্বিতীয় প্যাকেজের (পাঁচ্চর-ভাঙ্গা) অনুমোদিত ব্যয় এক হাজার ৩৭০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পটির ব্যয় চার হাজার ১১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আগামী জুনে প্রকল্পটির শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
যদিও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৫৫ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেন নির্মাণে প্রথম প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১৬ সালের মে মাসে। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরে তা দুই দফা বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৮৯২ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। এর পরও প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি থেকে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির বাকি কাজ শেষ করার জন্য ২০১৮ সালে নেয়া হয় অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প। সেটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে চার হাজার ১১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
দুই প্রকল্প মিলিয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন বাস্তবায়নে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার তিন কোটি ৯১ লাখ টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণব্যয় পড়ছে ২০০ কোটি সাত লাখ টাকা, যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।
গতকালের বৈঠকে জানানো হয়, বর্তমানে প্রকল্পটির আওতায় জুরাইন ফুটওভার ব্রিজ, বাবু বাজার লিংক রোড, ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক, শুভাঢ্যা ব্রিজ, ফিলিং স্টেশন ও এর পেছনের সার্ভিস রোড, টোল প্লাজার সার্ভিস এরিয়া, ফ্লাইওভারের লিংক রোডে ইলেকট্রিক লাইটিং ও সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে প্রকল্পটিতে বেশকিছু কাজ নতুনভাবে সংযোজন হয়েছে, যা ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এজন্য ডিপিপি সংশোধন করা প্রয়োজন।
নতুন সংযোজিত অংশগুলো হলোÑমাওয়া রাউন্ড অ্যাবাউট পুনঃডিজাইন ও নির্মাণ, পাঁচ্চর রাউন্ড অ্যাবাউট পুনঃডিজাইন ও নির্মাণ, নতুনভাবে সংযোজিত ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, ভাঙ্গায় সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর অফিস ও ট্রেনিং সেন্টার কাম ল্যাবরেটরি নির্মাণ, বিদ্যমান ব্রিজগুলোর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং এক্সপ্রেসওয়ের জন্য আলাদাভাবে গ্যাস স্টেশনের ব্যবস্থা করা।
বৈঠকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো, অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের ফলে বর্তমান চলমান কাজে স্থবিরতা, ঠিকাদারদের নির্মাণকাজের বকেয়া বিল পরিশোধে বিলম্ব, সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনে সময়ক্ষেপণ, শুভাঢ্যা ব্রিজের নকশা অনুমোদনে জটিলতা, রেল লিংক প্রকল্প কর্তৃক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় বিলম্ব, প্রকল্পের সড়কের রিটেইনিং ওয়ালের (ধারণকারী প্রাচীর) নিচে ওয়াসার পানির লাইন মেরামত এবং অবকাঠামো অনুযায়ী প্রকল্প হস্তান্তর প্রক্রিয়া।
বৈঠকে জানানো হয়, সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন সময়সাপেক্ষ। তাই দুটি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে গতকাল আলোচনা করা হয়। এর একটি হলো, বর্তমান সংশোধিত ডিপিপির কাজগুলো সম্পূর্ণ আলাদাভাবে নতুন ডিপিপি প্রণয়নপূর্বক নির্মাণ করা। অপর প্রস্তাবটি হলো, সংশোধিত ডিপিপিতে উল্লেখিত আইটেমগুলোর নকশা ও ব্যয় প্রাক্কলন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর কর্তৃক প্রস্তুতপূর্বক নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তৌহিদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের মিডিয়ায় কথা বলায় নিষেধ আছে। তাই সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’ তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গতকালের বৈঠকে উপস্থিত সড়ক পরিবহন বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পটিতে নতুন সংযোজিত অংশগুলো বাস্তবায়ন কতটুকু জরুরি এবং বিদ্যমান প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে তা কতটুকু করা যায় খতিয়ে দেখা হবে। তবে বিদ্যমান প্রকল্পটি সংশোধন না করার বিষয়ে বৈঠকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ১৫-২০ দিন পর প্রকল্পটির বিষয়ে আরেকটি বৈঠক করা হবে। তাতে বিদ্যমান প্রকল্প সংশোধন অথবা নতুন প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।