নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বে সবচেয়ে ব্যয়বহুল হিসেবে বিবেচিত ঢাকা-ভাঙ্গা-যশোর রেলপথটি। এর একাংশের (ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা) উদ্বোধন হচ্ছে আজ। এ রুটে আনুষ্ঠানিক কোনো ট্রেন চলার ঘোষণা এখনও আসেনি। তবে নতুন ট্রেনের জন্য ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে সম্প্রতি, যা রেলের বিদ্যমান ভাড়ার সাড়ে চারগুণেরও বেশি।
সূত্রমতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলা আন্তঃনগর ট্রেন তূর্ণা নিশিথা এক্সপ্রেসের ভাড়া শোভন চেয়ারে (নন-এসি) ৩৪৫ টাকা। আর এসি চেয়ারের ভাড়া ভ্যাটসহ ৬৫৬ টাকা। এই পথের দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার। অন্যদিকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের দূরত্ব ৩৪৩ কিলোমিটার। এ পথে চলা পদ্মা, সিল্কসিটি বা ধূমকেতু এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ারে ভাড়া ৩৪০ টাকা ও এসি চেয়ারে ভ্যাটসহ ৬৫৬ টাকা।
যদিও ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গার দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার। এই গন্তব্যে যেতে আন্তঃনগর ট্রেনে (নন-এসি) ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৫০ টাকা ও এসি চেয়ারে (ভ্যাটসহ) ৬৬৭ টাকা। অর্থাৎ ঢাকা-চট্টগ্রাম বা ঢাকা-রাজশাহীর সাড়ে চারগুণ ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে। এমনকি ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে বাসে ভাড়া নন-এসিতে ২৫০ টাকা ও এসিতে ৫০০ টাকা।
রেলওয়ের ভাড়া নির্ধারণ কমিটির প্রস্তাবটি রেল মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। রেলওয়ে সূত্র বলছে, প্রস্তাবিত ভাড়ার হারই অনুমোদিত হতে পারে। এমনটা হলে বাসের চেয়ে ট্রেনে নন-এসিতে ৪০ শতাংশ ও এসিতে ৩৩ শতাংশ বেশি ভাড়া গুনতে হবে।
সূত্র জানায়, ভাড়া প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রতিটি গন্তব্যের বাস্তব দূরত্বের সঙ্গে পদ্মা সেতু ও গেন্ডারিয়া-কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের জন্য বাড়তি দূরত্ব যোগ করেছে রেলওয়ের কমিটি। এক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব ধরা হয়েছে। একে রেলওয়ে পয়েন্টেজ চার্জের জন্য বাড়তি দূরত্ব বলছে। এতে ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুকে ধরা হয়েছে প্রায় ১৫৪ কিলোমিটার।
অন্যদিকে গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের প্রতি কিলোমিটারকে ধরা হয়েছে ৫ কিলোমিটার। এতে ২৩ কিলোমিটার উড়ালপথকে ধরা হয়েছে ১১৫ কিলোমিটার। এ জন্যই ঢাকা থেকে ভাঙ্গার প্রকৃত দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার হলেও রেলওয়ে আদায় করতে চায় ৩৫৩ কিলোমিটার দূরত্বের ভাড়া।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের অধীন ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। তবে এটি বেড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকায় ঠেকবে বলে ধারণা করছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। এতে কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণব্যয় পড়বে ২৬১ কোটি টাকার বেশি। যদিও বিশ্বে বিশেষত চীনে হাইস্পিড ট্রেনের জন্য বিশেষায়িত রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হয় গড়ে ২০০ কোটি টাকার কম।
আজ ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথের উদ্বোধন হলেও আগামী বছর যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালুর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে রেলওয়ে। পুরো রেলপথ চালু হলে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, যশোর দিয়ে ট্রেন খুলনায় যেতে পারবে। একইভাবে রাজবাড়ী হয়ে উত্তরবঙ্গের পথেও ট্রেন চলতে পারবে।
রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, আজ উদ্বোধন হলেও ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে আগামী নভেম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। শুরুতে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে তিনটি ট্রেন চলাচল করতে পারে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। ভাঙ্গা থেকে ট্রেনটি রাজবাড়ী, পাটুরিয়া, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ ও যশোর হয়ে খুলনায় যাবে। বর্তমানে ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতু, ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া হয়ে চলাচল করে।
অন্যদিকে রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে রাজশাহী থেকে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করে। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনটি ঢাকা পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া ঢাকা-পদ্মা সেতু-রাজবাড়ী রুটে একটি কমিউটার ট্রেন চালানোর কথাও ভাবছে রেলওয়ে।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে সেতু বিভাগ। এই সেতুর ওপর রেললাইন বসিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে ট্রেন চলাচলের জন্য সেতু কর্তৃপক্ষকে টোল দিতে হবে। তবে এখনও টোলহার নিয়ে একমত হতে পারেনি সরকারি দুই সংস্থা।