ঢাকা শহরে শিশুদের বিকাশের সুযোগ কতটুকু?

আজকের শিশু দেশ ও জাতির আগামী দিনের কর্ণধার। কিন্তু সে শিশুদেরই যদি সুষ্ঠু বিকাশ না ঘটে, তাহলে ভবিষ্যৎটা কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়। একটি শিশু খেলার মাঠে খেলবে, সবার সঙ্গে মিশবে, মাটির সংস্পর্শে যাবে, কাদা-ধুলো গায়ে মাখবে, প্রাণবন্তভাবে প্রকৃতির মাঝে বড় হবেÑতবেই তো আগামীর দিনগুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, ঘটবে শিশুদের সুষ্ঠু সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক বিকাশ। কিন্তু এই ঢাকা শহরের শিশুরা কেমন আছে? তাদের বিকাশ কতটুকু ঘটছে? তারা কি খেলাধুলা করার সুযোগ পাচ্ছে?

এই ঢাকা শহরের ৯৮ শতাংশ বেসরকারি স্কুলেই খেলার মাঠ নেই। তাহলে শিশুরা যে খেলাধুলা করে, সবুজ মাঠ আর সবুজ গাছপালা-সমৃদ্ধ প্রাকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠার কথা তা আর হচ্ছে কোথায়? খাঁচার মতো ছোট্ট একটি স্কুলগাড়িতে করে স্কুলে আসছে, আবার ক্লাস শেষে সেই খাঁচার ভেতরে বসেই বাসায় ফিরছে। যারা উচ্চবিত্ত তাদের সন্তানরা গাড়িতে করে স্কুলে আসে। গাড়ির ভেতরেই তারা বন্দি থাকে। বলা হয়ে থাকে, ধুলোবালি জমা গ্লাসের ভেতর দিয়ে ঝাপসা এই শহর দেখতে দেখতে তাদের মনে দেশটা ঝাপসাই হয়ে যায়।

সারাদিন বাসায় বসে টিভি দেখা, কিংবা ভিডিও গেমসহ নানা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করেই সময় কাটে এই শহরের শিশুদের। কিন্তু যেসব শিশু বেশি টেলিভিশন দেখে, তাদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না। ‘টেলিভিশনের নেতিবাচক প্রভাব ও আমাদের শিশু’ এ বিষয়ে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের গবেষণায় উঠে এসেছে, ঢাকা শহরে ৩৭ শতাংশ শিশু ঘরের মধ্যে খেলাধুলা করে এবং ২৯ শতাংশ শিশু কোনো খেলাধুলা করে না।

খেলাধুলা না করে পঙ্গুত্বের শৈশব নিয়ে বেড়ে ওঠা এসব শিশুর বিনোদনের সঙ্গী হয় টেলিভিশন। একটি গবেষণা বলছে, ১৬ শতাংশ শিশু গড়ে প্রতিদিন এক ঘণ্টা, ৩৭ শতাংশ দুই ঘণ্টা, ২৯ শতাংশ তিন ঘণ্টা, ১৩ শতাংশ চার ঘণ্টা এবং পাঁচ শতাংশ শিশু চার ঘণ্টারও বেশি সময় টেলিভিশন দেখে। আর টেলিভিশন না দেখা শিশুর সংখ্যা মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

ঢাকা শহরে শিশুদের বিকাশের জন্য খেলার মাঠ এবং খেলাধুলা করার জন্য মনোরম পরিবেশের যথেষ্ট অভাব। ছুটির দিনে মা-বাবারা তাদের সন্তানদের কোনো পার্কে নিয়ে যান, যেখানে শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এই শহরে পার্কে প্রবেশ থেকে শুরু করে খেলাধুলা তথা বিভিন্ন রাইড যে চড়ার মূল্য, তাতে মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাইডে আরোহণ থেকে বঞ্চিত হয়। উপযুক্ত পরিবেশের অভাব তো রয়েছেই।

শহরের একেকটা বাসা যেন শিশুদের জন্য বন্দিঘর। অধিকাংশ বিল্ডিংয়ে ছাদ থাকলেও তা ব্যবহারের অনুমতি নেই। পড়ন্ত বিকালে শিশুরা যে মা-বাবার সঙ্গে ছাদে গিয়ে মুক্ত পরিবেশে একটু হাওয়া গায়ে মাখবে, তারও কোনো সুযোগ নেই। এককথায় ঢাকা শহরে শিশুদের বিকাশের সব পথই প্রায় বন্ধ। আর তাই শিশুরা হয়ে উঠছে মোবাইল আসক্ত, ইন্টারনেট আসক্ত ও গেম আসক্ত।

এ অবস্থায় সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত শিশুদের সুস্থ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, প্লে জোন ও মানসম্মত বিনোদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। তবেই বিকশিত হবে শিশুরা, বিকশিত হবে শিশুদের ভবিষ্যৎ।

জোবাইদুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০