নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী। গতকাল রোববার দুপুরের এই হামলার জন্য ছাত্রলীগ এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে সরকার-সমর্থক একটি সংগঠনকে দায়ী করেছে ছাত্রদল। এদিকে হামলার দায় অস্বীকার করে ছাত্রলীগ এজন্য মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ দায় অস্বীকার করেছে।
আহতরা হলেন ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সহ তথ্য ও গবেষণা-বিষয়ক সম্পাদক মামুন খান, জিয়া হলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাজাহান শাওন, তারেক হাসান মামুন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল্লাহ নাঈম ও সূর্যসেন হলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহফুজুর রহমান চৌধুরী। চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের এক ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে তাকে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের কোনো কোনো নেতা। তবে হামলার আগে ছাত্রদলের এক সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবি করা হয়, ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কোনো ফেসবুক আইডি নেই। এছাড়া বিভিন্ন নেতার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অপপ্রচার চলছে।
বেলা পৌনে ১টায় মধুর ক্যান্টিন ও আইবিএ ভবনের গেটের সামনে হামলার শিকার হন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। হামলার সময় ছাত্রদলের নারীকর্মী সুলতানা জেসমিন জুঁই, কানেতা ইয়া লামলাম ও মানসুরা আলমকে লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ জানিয়েছে ছাত্রদল। এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন।
ছাত্রদলের নেতারা বলেন, তাদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে কিছু ‘অতি উৎসাহী ছাত্রলীগ নেতা’ অপপ্রচার করছে। ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কোনো ফেসবুক আইডি নেই। সংবাদ সম্মেলন শেষে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী মধুর ক্যান্টিনে যান। তবে তাদের সঙ্গে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না।
মধুর ক্যান্টিনে আগে থেকেই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সংবাদ সম্মেলন চলছিল। তারা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শ্যামলের নামের একটি ফেসবুক আইডির মন্তব্যের জের ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। শ্যামলের নামের ওই ফেসবুক আইডি থেকে বাংলাদেশে ‘পঁচাত্তরের পুনরাবৃত্তি’ ঘটানোর হুমকি দেওয়া হয় বলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের অভিযোগ।
সংবাদ সম্মেলন শেষ হতেই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে মধুর ক্যান্টিনে থাকা ছাত্রদলের ১৫-২০ নেতাকর্মীকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর ক্যান্টিনের বাইরে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা চেয়ার নিয়ে হামলা চালায় বলে ছাত্রদল নেতাদের অভিযোগ।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা আল মামুন বলেন, ‘আমরা ছাত্রদলের ওপর হামলা চালাইনি। আমরা তাদের প্রতিহত করেছি। তারা আমাদের সংবাদ সম্মেলন পণ্ড করার চেষ্টা চালাচ্ছিল।’
তবে ছাত্রলীগ এই হামলার দায় নেবে না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ওপর এই হামলার দায় দেন।
বিষয়টি জানানো হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্নমত থাকতেই পারে। এটি সবাইকে মেনে নিতে হবে। ছাত্রদের কাছে থেকে ছাত্রসুলভ আচরণ আমরা আশা করব।’