বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে আওয়ামী সমর্থক নীল দল। তবে সিনেটের অন্যতম অংশ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন না দেওয়ায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট গ্রহণকালে ছাত্ররা সেখানে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে সিনেটে ছাত্রদের পাঁচজন নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের নীল দল তাদের আধিপত্য ধরে রেখেছে। তারা ৩৫টি পদের বিপরীতে ৩৩টিতে বিজয়ী হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতপন্থি সাদা দলের শিক্ষকরা বিজয় অর্জন করেন দুটি পদে। বামপন্থি শিক্ষকদের গোলাপি দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ছাড়া সিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে ছাত্ররা মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভের সময় কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভোটগ্রহণকালে এসব ঘটনা ঘটে বলে ছাত্ররা দাবি করেন।
গত রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইভেন্ট খুলে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধনের ডাক দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে মানববন্ধন শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এতে যোগ দেন। তারা মুখে কালো কাপড় এবং হাতে কালো ব্যাজ ধারণ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
মানববন্ধনের সংগঠক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মাসুদ আল মাহদী শেয়ার বিজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেটে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধির কথা বলা হলেও ২৭ বছর ধরে এর বাস্তবায়ন নেই। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ছাড়া সিনেট নির্বাচন অবৈধ। আমরা যখন মানববন্ধন শুরু করি, তখন শিক্ষকরা আমাদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা এবং পরবর্তী সময়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এ সময় ছাত্রদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকরা হাতাহাতিতেও লিপ্ত হন।
তিনি বলেন, ঢাবির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ ও সহকারী প্রক্টর রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন শিক্ষক আমাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। পরে এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী এবং পাঁচটি ছাত্রসংগঠন অংশ নেয়।
জানতে চাইলে কবি জসীমউদ্?দীন হলের প্রাধ্যক্ষ ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি নির্বাচনের প্রার্থী। আমি ওই জায়গায় যাবো কেন? এ ঘটনা তো প্রক্টরিয়াল টিম নিবৃত করার চেষ্টা করছিল।
ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বরাবরই ডাকসু নির্বাচন চাই। তবে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের সঙ্গে এটাকে জড়ানোর কিছু নেই। প্রত্যেকটা নির্বাচনের পটভূমি এক নয়। শিক্ষার্থীদের উচিত ধৈর্য ধারণ করে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দাবি জানানো।
নির্বাচনে বিজয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এ নির্বাচনের ফলে প্রমাণিত হয়েছে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের পরাজিত করতে পারে না। আমি আশা করছি, এ সিনেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুণœ রাখায় কাজ করে যাবে।
নীল দলের যারা বিজয়ী হয়েছেন, তারা হলেন অধ্যাপক নাজমা শাহীন, মো. রহমত উল্লাহ, আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া, আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, আবুল মনসুর আহাম্মাদ, আ ক ম জামাল উদ্দীন, ইশতিয়াক মঈন সৈয়দ, এসএম আবদুর রহমান, কাজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি, তৌহিদা রশীদ, দেলোয়ার হোসাইন, অধ্যাপক বায়তুল্লাহ কাদেরী, মুবিনা খন্দকার, আফতাব আলী শেখ, আফতাব উদ্দিন, আবদুল আজিজ, আবদুস ছামাদ, জিয়াউর রহমান, ফজলুর রহমান, মজিবুর রহমান, মোহাম্মাদ আলী আক্কাস, শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, সুপ্রিয়া সাহা, সুব্রত কুমার আদিত্য, হাসিবুর রশীদ, এসএম রেজাউল করিম, কাজী হানিয়াম মারিয়া, চন্দ্রনাথ পোদ্দার, জান্নাতুল ফেরদৌস, পাপিয়া হক, লাফিফা জামাল ও নুসরাত জাহান। সাদা দল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও লুৎফর রহমান।