ঢাবির হলে পাঁচ মাসে নির্যাতনের শিকার ১৮ শিক্ষার্থী: সমীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মহামারির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর পাঁচ মাসে হলগুলোয় ১৮ শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার-বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম ‘স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট টর্চার (এসএটি)’ গতকাল সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই এসব নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সমীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরেন এসএটি’র প্রতিষ্ঠাতা সালেহ উদ্দিন সিফাত। তিনি বলেন, ‘কভিড সংক্রমণ কমলে গত ৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেয়া হয়। তখন প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি ছিল ‘গেস্টরুম নির্যাতন’ হবে না। কিন্তু এসএটি অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, ৫ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত ছয়টি হলে ১০টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যাতে ভুক্তভোগী হয়েছেন ১৮ শিক্ষার্থী। এর তিনটি ঘটনায় প্রশাসন যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তাও ‘নামমাত্র’ বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে এসএটি।

এছাড়া গত এক বছরে তিন ক্যাম্পাস-সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহের সময় শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ আবাসিক হলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে স্যার এ এফ রহমান হলে। সেখানে আট শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হন, কিন্তু হল প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

‘ম্যানার’ (আচরণ) শেখানোর নামে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে তিন শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কমসূচিতে না যাওয়ায় মাস্টারদা সূর্য সেন হলে দুই শিক্ষার্থী এবং ফেসবুক পোস্টের কারণে বিজয় একাত্তর হলে দুই শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হলেও এসব ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে এসএটি জানায়। তবে সম্প্রীতি বিজয় একাত্তর হলে আরেক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় তিন শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য হল থেকে বহিষ্কার এবং মাস্টারদা সূর্য সেন হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় একজনকে বহিষ্কার করা হয়।

এছাড়া জগন্নাথ হলে এক শিক্ষার্থী এবং রোকেয়া হলে এক শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

সিফাত জানান, এখন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে ষাণসিক ও বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে তারা।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই প্রতিবেদন তুলে ধরছি, যাতে প্রত্যেকটি নির্যাতনের ঘটনা তদন্তপূর্বক নির্যাতকদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রাশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি প্রশাসনিক বিধি এবং আইন তৈরি করারও প্রস্তাব রাখছি।’ এ ধরনের নির্যাতন না থামলে আদালতে যাওয়ার ঘোষণাও দেন সিফাত। সংবাদ সম্মেলনে এসএটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্মৃতি আফরোজ সুমি, আহনাফ সায়েদ খান, আনাস বিন মনির, সাদ আরমান নাফিস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০