Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 7:51 pm

ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে গত রোববার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও তাণ্ডব চালানো হয়েছে। ওই রাতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাত পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে রাত দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে উপাচার্যের বাসভবনে ওই হামলার ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পাঁচ শতাধিক তরুণ ওই হামলায় অংশ নেয়। তারা গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকে। তাদের অনেকেরই মুখে কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। দুই তলা ওই বাসভবনের ঘরে ঘরে ঢুকে জানালার কাচসহ প্রায় প্রতিটি আসবাবপত্র তারা ভেঙে ফেলে। এমনকি বাথরুম ও রান্নাঘরও তারা তছনছ করে। ভবনের সিসি ক্যামেরাগুলোও ভেঙে ফেলা হয়।

ওই ভবনের একজন কর্মচারী গণমাধ্যমকে জানান, হামলাকারীদের হাতে লাঠি ও বাঁশ ছিল। বাসভবনে তখন উপাচার্য, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেও উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বাড়িতেই ছিলেন। উপাচার্যের বাসভবনে থাকা চারটি গাড়ির মধ্যে দুটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়, দুটি ভাঙচুরের শিকার হয়। ভবনের সামনে কয়েকটি মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়। হামলা ও তাণ্ডব থামার পর উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের সামনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন। সরকার প্রধানকে তিনি সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।

গতকাল সোমবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাসভবন লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে। মেঝেতে ছড়িয়ে আছে ভাঙা কাচ, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কাগজপত্র। ভবনের ফটক দিয়ে প্রবেশ করার পর থেকেই রাতের তাণ্ডবের চিহ্ন দেখা যায়। বাসভবনের সামনে পোড়া অবস্থায় কিছু চেয়ার-টেবিল পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এদিকে গতকাল সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়েছিল। তার সঙ্গে কোটার কোনো সংযোগ নেই। তারপরও তার ওপর হামলা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোটার বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষার্থীদের বক্তব্য তাদের জানানো হয়েছে। এরপরও আমার বাসায় তাণ্ডব পরিচালিত হয়েছে। এটি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সেখানে আমার পরিবার ছিল। তাদের জীবন ঝুঁকিতে ছিল। সবাইকে মেরে ফেলার চেষ্টা ছিল। কিছু ছাত্র আমার প্রাণ রক্ষা করেছে। এখানে লাশের রাজনীতি ছিল। এখানে আমাকে হত্যার পরিকল্পনা থেকে এ হামলা করা হয়েছে।’

মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘হামলার ঘটনায় অনেক প্রাণহানি ঘটতে পারত। আন্দোলনরত ব্যক্তিরা ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট চেষ্টার মাধ্যমে দরজা ভেঙেছে। আমি নিজের নিরাপত্তার কথা ভুলে শিক্ষার্থীদের অবস্থা দেখার জন্য বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এজন্য বেঁচে গেছি। বেডরুমে থাকলে আমি মারা যেতাম।’

উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নামে ভাঙচুর, হামলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত শিক্ষামন্ত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও হত্যা চেষ্টা এবং ভাঙচুরের ঘটনা নজিরবিহীন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পেছনে যারা ইন্ধন দিচ্ছেন, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকেও আহ্বান জানান মন্ত্রী।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চাকরির কোটা সংরক্ষণ বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং সরকার সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও মেধা না থাকলে কোটাধারীরাও চাকরিতে আসতে পারে না। কোটা পূরণ না হলে সেসব পদ মেধা তালিকা থেকেই পূরণ করার নির্দেশনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত রোববার দিবাগত রাতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। ওই রাতেই উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও তাণ্ডব চালানো হয়েছে।