নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে প্রশ্ন আসার পর ‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগ ওঠায় ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার রাতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। যদিও কর্তৃপক্ষ ওইদিন ‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।
উপাচার্য বলেন, বোঝা গেল যে একটা অশুভ চক্র আছে। আমরা তো ডিজিটাল জালিয়াতচক্রকে ধরে ফেলেছি। তবে একটা চক্র এখনও সক্রিয় আছে। যেহেতু পরীক্ষার পর একটা অভিযোগ উঠল, তাই সেটা কতটুকু গ্রহণযোগ্য, তা পরীক্ষা করে দেখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মুহাম্মদ সামাদের নেতৃত্বধীন তদন্ত কমিটির দুই সদস্য হলেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ইমদাদুল হক ও সহকারী প্রক্টর মাকসুদুর রহমান। কমিটিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, শুক্রবার রাতেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজকে (শনিবার) ছুটির দিন ছিল, তবুও আমরা একটি মিটিং করেছি। গাইডলাইন ঠিক করেছি। আরও একটি মিটিং করব আগামীকাল (আজ)।
এদিকে বগুড়ার যে কোচিং সেন্টার থেকে পাওয়া হাতে লেখা উত্তরসহ প্রশ্ন শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে আসে, সেই এক্সক্লুসিভ প্রাইভেট প্রোগ্রামের (ইপিপি) পরিচালক প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাসের বাইরে ৮১টি কেন্দ্রে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শুরুর ৩১ মিনিট পরই হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ১৪টি ছবি সাংবাদিকদের হাতে আসে। পরে যাচাই করে দেখা যায়, এ প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৪৩ মিনিট আগে (সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে) এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে আসে।
নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র সে সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পরীক্ষার আগের রাতে গ্রাম থেকে এক পরীক্ষার্থী আসে তার কাছে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওই পরীক্ষার্থীর মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে এক সেট প্রশ্নপত্র আসে। তবে কিছু সময় পর জানা যায় সেটি ভুল। কিছুক্ষণ পর সকাল ৯টা ১৭ মিনিটের দিকে ফের এক সেট হাতে লেখা উত্তরসহ প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপে আসে। প্রশ্নগুলো অভিভাবকের মাধ্যমে ওই পরীক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে আসে। পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে জানতে পারি, প্রশ্নগুলো বগুড়ার এক প্রাইভেট কোচিং সেন্টার থেকে তার বাবা পেয়ে তাকে পাঠিয়েছেন। তারপর সেটা এক সাংবাদিককে জানাই। পরে পরীক্ষার মূল প্রশ্নের সঙ্গে সেটির মিল পাওয়া যায়।
পরে দেখা গেছে, মূল প্রশ্নপত্র ও মোবাইল ফোনে আসা প্রশ্নের ৭২টি হুবহু একই। ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে বাংলা অংশে ১৯টি, ইংরেজি অংশে ১৭টি, সাধারণ জ্ঞান অংশে ৩৬টি (বাংলাদেশ বিষয়াবলি ১৬ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ২০) প্রশ্নর হুবহু মিল রয়েছে।