শেয়ার বিজ ডেস্ক: সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করিয়েছিলেন, তাদের হিসাব-নিকাশ নেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে (কেআইবি) আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
নিজের গ্রেফতারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষমতায় থেকে তখন অত্যাচার-নির্যাতন করেছে বিএনপি সরকার। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর প্রথম গ্রেফতার করা হলো আমাকে। কারা এ কাজ করেছে, তা আমি জানি। তাদের হিসাব-নিকাশ পরে করব।’
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে কী কী ষড়যন্ত্র হয়েছে তা উল্লেখ করেন। এর সূত্র ধরেই সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তাকে গ্রেফতারের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশের উন্নয়ন করলেও ষড়যন্ত্রের কারণে ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে ষড়যন্ত্র হলো। ভোট বেশি পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারিনি। ওই সময় বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে শুরু করল জুলুম-অত্যাচার। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো তারা গ্রামের পর গ্রাম নির্যাতন চালিয়েছে। মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, মানুষের চোখ তুলে নিয়েছে, হাত-পা ভেঙে দিয়েছে, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করেছে, ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, পুকুর কেটে দিয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। ভোট দেওয়ার অপরাধে এমন কোনো অত্যাচার নেই, তারা করেনি। ছয় বছরের শিশুকে পর্যন্ত ধর্ষণ করেছে। প্রতিহিংসার বশে তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এসব করেছে। পাঁচ-পাঁচটি বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে বাংলাদেশকে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তারা বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের দেশে পরিণত করেছে। গ্রেনেড হামলা তো আছেই। এভাবে অত্যাচার করে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা, ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও যেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসতে পারে, তার জন্যও ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।’
মুক্তিযোদ্ধা কোটা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকার গঠনের পর আমাদের লক্ষ্য ছিল দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা। যে মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করলেন, তারা ভিক্ষা করবে বা রিকশা চালাবে, এটা অপমানজনক। তাদের সন্তানেরা পড়ালেখার সুযোগ পাবে না, সেটা হতে পারে না। তাই আমরা ক্ষমতায় এসে তাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করলাম। আমরা চেষ্টা করছি সবার মধ্যে ইতিহাসকে ছড়িয়ে দেওয়ার।’
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালে সরকার গঠন করেছি। এরপর ২০১৩ সালে তারা এক দুর্বিষহ অবস্থা তৈরি করে। সে অবস্থা আমরা সামাল দিয়েছি। ২০১৪ সালে আবার নির্বাচন হয়। মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসি। কিন্তু তারা ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে সাড়ে তিন হাজার মানুষ পুড়িয়েছে। হাজার হাজার গাড়ি, বাস, ট্রাক, লঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। সরকারি অফিসে আগুন দিয়েছে। কেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলোক্সএটাই তাদের অন্তর্জ¡ালা। তারা তো ক্ষমতায় থেকে ভোগ-বিলাস করেছে, মানি লন্ডারিং করে ধরা পড়েছে। এতিম খানার টাকা পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছে। সবকিছু ধরা পড়েছে। এতে আমাদের কোনো হাত নেই। কিন্তু আদালত তাদের সাজা দিলে তারা মানে না। তারা কিছুই মানে না। তারা ক্ষমতায় থেকে মানুষকে হত্যা করেছে, এখনও তাই করতে চায়। দেশের কোনো উন্নয়ন তারা চোখেই দেখে না।’