Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:40 am

তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সজাগ থাকার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

শেয়ার বিজ ডেস্ক: তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার ও জালিয়াতি রোধে সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রযুক্তিবিদদের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল বঙ্গভবনের গ্যালারি হল থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে আয়োজিত চার দিনব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশ্ব সম্মেলন ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন আইটি, ২০২১’ ও ‘অ্যাসোসিও ডিজিটাল সামিট, ২০২১’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি একদিকে যেমন আমাদের জন্য অবারিত সুযোগের দ্বার উম্মোচিত করেছে, তেমনি এর অপব্যবহার ও জালিয়াতির কারণে অনেক চ্যালেঞ্জেরও জন্ম দিয়েছে।’ সূত্র: বাসস।

তথ্যপ্রযুক্তির বিনিময় ও হস্তান্তর বৈশ্বিক উন্নয়নের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভাবন বা আমদানিই যথেষ্ট নয়, বরং এর টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।

রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা স্থানীয় টেকসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন, প্রসার ও ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মডেল হিসেবে গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ।’

তিনি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অগ্রগামী প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে।’

বাঙালি জাতির ইতিহাসে ২০২১ সাল একটি অনন্য ও স্মরণীয় বছর বলে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, এ বছর আমরা একই সঙ্গে উদ্যাপন করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জš§শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

তিনি জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ২০০৯ সালে দেশের মাত্র আট লাখ মানুষ ইন্টারনেট সেবা পেত। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১২ কোটির বেশি। এ সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে চারগুণের বেশি। এ বছর পূরণ হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার।

তিনি বলেন, দূরদর্শী চিন্তা থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান গবেষণা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভিত্তি রচনা করেছিলেন। তারই উদ্যোগে ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আইটিইউ’র সদস্যপদ লাভ করে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে পথ চলা থেমে যায়।

দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে অবকাঠামোর উন্নয়নসহ নানা পদক্ষেপ নেবেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ফোনের মনোপলি ভেঙে তা সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার বিগত এক যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশের চার স্তম্ভÑকানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্ট ও আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির অগ্রগতি ঘিরে নেয়া বেশিরভাগ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। ফলে দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব বলে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তার প্রমাণ মহামারির দুঃসময়ে তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে দেশে গড়ে উঠছে ডিজিটাল অর্থনীতি। আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টির বেশি দেশে বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটি সেবা সরবরাহ করা হচ্ছে। আইটি খাতে রপ্তানি এক দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ২০২৫ সালের মধ্যে এ আয় পাঁচ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে এবং জিডিপিতে সফটওয়্যার ও আইসিটি সেবা খাতের অবদান পাঁচ শতাংশে উন্নীত হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এ লক্ষ্য সামনে রেখে দেশজুড়ে গড়ে তুলেছে ৩৯টি হাইটেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার।

ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার দিক থেকে সারাবিশ্বে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশে সাড়ে ছয় লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। তাদের পেশাগত উন্নয়নে আইডি কার্ড দেয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ডাক্তার মো. আব্দুল মান্নান, উইটসার চেয়ারম্যান ইয়ানিস সিরোস ও বিসিএস সভাপতি মোহাম্মদ শহীদ-উল-মুনীর অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন।