ইমাম হোসেন, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) : তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশ্ব যোগাযোগ এখন হাতের মুঠোয়। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে মুহূর্তের মধ্যেই যোগাযোগ সম্ভব এখন। কয়েক বছর আগেও প্রিয়জনের একটি চিঠির জন্য কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডাকপিয়নের অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকতেন স্বজনরা। ডাকপিয়নের বাইসাইকেলের বেলের আওয়াজ শুনে যেন ঘুম আমার ভাঙল, ওই বুঝি তোমার চিঠি এলো। এখন আর মানুষের মধ্যে নাড়া দেয় না ডাকপিয়নের বাইসাইকেলের বেলের আওয়াজ। এখন ডাকঘর চালু আছে আর ডাক বিভাগে চিঠি আসছে। ডাকপিয়ন আসা চিঠি মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিলেও তার হার খুবই কম। আত্মীয়স্বজন, প্রিয়জনের চিঠির জন্য এখন আর ডাকপিয়নের অপেক্ষায় থাকতে হয় না। আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রসরতায় গুরুত্ব হারাতে বসেছে ডাকঘর। তাই অযতœ-অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ডাকবাক্স, কদর নেই ডাকপিয়নের।
একসময় মানুষ অপেক্ষায় থাকত ডাকপিয়নের গলার আওয়াজের। এ বুঝি এলো প্রিয়জনের চিঠি। এখন আর সে অবস্থা নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাপকের কাছে তার কাক্সিক্ষত চিঠিপত্র, টাকা-পয়সা ও নথিপত্র যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছে দিতেন ডাকহরকরা। পাশাপাশি যারা আত্মীয়-প্রিয়জনের কাছে চিঠিপত্র বা কোনো সাধারণ ডকুমেন্ট পাঠাতে তারা ছুটে যেতেন লাল রঙের কাক্সিক্ষত ডাকবাক্সের কাছে। ডাকপিয়ন এসব বাক্স থেকে জমা হওয়া ডাকগুলোর বিকালে নিয়ে ডাকঘরে ফিরে যেতেন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে আপনজনের কাছে লেখা চিঠি পোস্ট করতে পারলেই যেন স্বস্তি। তখন ডাকবাক্সগুলোও লাল রঙে রাঙিয়ে বেশ যতেœ রাখা হতো। সে সময় ডাকবাক্সে চিঠিপত্র যাতে রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট না হয় সেজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থাও করা হতো। প্রবাসীরা ড্রাফট করে টাকা পাঠাতেন স্বজনদের নামে বা সরাসরি ব্যাংকে নিজেদের হিসেবে। ডাকপিয়নও এসব রেজিস্ট্রকৃত ডাক নির্ধারিত ঠিকানা ও ব্যাংকে পৌঁছে দিতেন। তাদের কাছে ডাকপিয়নের কদরের কথা তো বলাইবাহুল্য। প্রাপকের হাতে বিদেশি কোনো চিঠি তুলে দিতে পারলেই পিয়নকে সম্মানি দিয়ে খুশি করা হতো। শুধু চিঠি নয়, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে কাগজপত্রের জন্যও ডাক পিয়নকে খুঁজতে হতো মানুষকে।
কালের বিবর্তনে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন, আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহারে এখন প্রিয়জনের কোনো খবরের জন্য ডাকপিয়নের পথ চেয়ে থাকতে হয় না। বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে প্রান্তে প্রিয়জন থাকুক না কেন মুহূর্তের মধ্যে তার সংবাদ নেয়া যায়। আর সে কারণে মানুষের কাছে এখন আর ডাকপিয়নের তেমন কদর নেই। তবে শুধু সরকারি অফিসে ডাকঘরের মাধ্যমে এখন চিঠিপত্র দেয়া-নেয়া হয় ডাক বিভাগের মাধ্যমে।
মীরসরাই উপজেলা ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার নুর আলম জানান, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে মধ্যে ডাক ব্যবস্থাপনার গতি কিছুটা কমে গিয়েছিল। তবে এখনও আমার অফিসে প্রায় দৈনিক ৪০-৫০টি সরকারি বেসরকারি চিঠি আসে। সেভিংস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ ডাকঘরে
দৈনিক প্রায় ৫০ লাখ টাকা লেনদেন হয় এবং ৩ বছর মেয়াদি ফিক্সড ডিপোজিটসহ নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।