Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 12:33 pm

তথ্য গোপন কোম্পানির নাকি ডিএসইর?

আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির অনুমোদিত মূলধন আড়াই কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে যে ৩০ কোটি টাকা হয়েছে, তা জানেন না বিনিয়োগকারীরা। কারণ কোম্পানি এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা। বিষয়টি কোম্পানি ও ডিএসই থেকে গোপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা। এদিকে কোম্পানি থেকে দায়ভার চাপানো হচ্ছে ডিএসইর ওপর। আর এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি স্টক এক্সচেঞ্জটি।

তথ্য মতে, গত মাসে কোম্পানিটির নাম পরিবর্তনের বিষয়টি ডিএসই থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে ডিএসইর সংবাদ প্রকাশে জানানো হয়। কিন্তু এর সঙ্গে কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন বৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করা হয় না। অথচ ডিএসইর ওয়েবসাইটে কোম্পানিটির প্রোফাইলে অনুমোদিত মূলধন আড়াই কোটির স্থানে ৩০ কোটি টাকা দেখানো হচ্ছে, যা কোম্পানি থেকে জানানো হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।

অন্যদিকে শুধু ডিএসইকে জানিয়েই চেপে গেছে কোম্পানিটি। এ বিষয়ে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) প্রকাশ করা হয়নি; যা নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের তথ্য পিএসআই আকারে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশ করার বিষয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটি ডিএসইকে জানিয়েছে, তথ্য প্রকাশ করা ডিএসইর এখতিয়ার বলে দায়ভার চাপিয়ে দিচ্ছে কোম্পানি। একই সঙ্গে কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে কোনো পিএসআই প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। তাই শুধু ডিএসইকে জানিয়েই বিষয়টি গোপন রেখেছে কোম্পানি। তাই তথ্য গোপনে কোম্পানির এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে শাস্তির দাবি তুলেন বিনিয়োগকারীরা। নানা অনিয়ম ও তথ্য ঠিকভাবে প্রকাশ করা বা বিনিয়োগকারীদের না জানানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বিএসইসির দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের দাবি জানানো হয়।

এদিকে ডিএসইর তথ্য প্রকাশে এ ধরনের গাফিলতি প্রায়ই দেখা যায়। মাঝে মধ্যে ডিএসই ভুল তথ্য প্রকাশ করে, আর না হয় দেরিতে বা তথ্য প্রকাশই করে না। ফলে বিনিয়োগকারী বিভ্রান্তেতে থাকেন এবং অনেক সময় সঠিক তথ্য না জেনেই বিনিয়োগ করেন। এতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই ডিএসইর এ ধরনের সমস্যা ও গাফিলতির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তির দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে সমাধানের বিষয়ে দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি এমবি ফার্মার তথ্য প্রকাশ না করা এবং শেয়ারহোল্ডারদের অবহতি না করার বিষয়ে অভিযোগ জানান বিনিয়োগকারীরা।

অভিযোগে তারা বলেন, কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন আড়াই কোটি টাকা থেকে ৩০ কোটি টাকায় বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি ডিএসই কর্তৃক অনুমোদন পেয়েছে বলে ডিএসইর কোম্পানির প্রোফাইলের তথ্য থেকে জানা গেলেও, এ বিষয়ে কোম্পানি বা ডিএসই নিউজ পোর্টালে কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি। গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ অনুষ্ঠিত এমবি ফার্মার এজিএমে কোম্পানির নামের শেষে লিমিটেডের পরিবর্তে পিএলসি এবং কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন আড়াই কোটি টাকা থেকে ৩০ কোটি টাকায় বৃদ্ধির জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সম্প্রতি কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি করার নিউজটি ডিএসইর নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হলেও পরবর্তীকালে অনুমোদিত মূলধন বৃদ্ধির নিউজটি ডিএসইর বা কোম্পানি কর্তৃক শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত না করে গোপন করা হয়েছে। এতে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির বর্তমান অনুমোদিত মূলধন সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম, সেসব কোম্পানিকে ২০২১ সালের মধ্যে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন করার জন্য বলা হলেও এখনও অনেক কোম্পানি পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করেনি।

উল্লেখ্য, অনেক তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ২ শতাংশ শেয়ারধারণকারীদের মধ্য থেকে একজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নিযুক্ত করতে হয়। কিন্তু এমবি ফার্মায় শেয়ারহোল্ডার পরিচালক না থাকায় লভ্যাংশ পাওয়া ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণ হচ্ছে না। গত কয়েক বছর ধরে দেশে কভিড পরিস্থিতিতে সব ওষুধ কোম্পানি ভালো মুনাফা করে শেয়ারহোল্ডারদের ভালো লভ্যাংশ দিয়ে এলেও দীর্ঘদিন ধরে এমবি ফার্মা শুধু ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের নিরাশ করছে। গত বছর ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েও অনুমোদন না পাওয়ায় শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ পাননি। এছাড়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নিয়োগ না দেয়া, অনুমোদিত মূলধন বৃদ্ধির তথ্য গোপন, কোম্পানির প্রচুর স্থায়ী সম্পদ থাকার পরও দীর্ঘদিন ধরে সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন না করে কোম্পানিকে দুর্বল দেখানো এবং বিদেশি বিনিয়োগকারী পরিচালকদের মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকা প্রভৃতি বিষয় নন-কমপ্লায়েন্সের অন্তর্ভুক্ত। এসব বিষয়ে শেয়ারহোল্ডাররা বিএসইসির যথাযথ হস্তক্ষেপ ও তদন্ত কামনা করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিটির সচিব মোহাম্মদ আমির হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, তথ্য প্রকাশ করা বা না করা ডিএসইর বিষয়। এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না। আমরা সময়ে সময়ে ডিএসইকে সব তথ্য জানিয়ে দিয়েছি। তাদের জানিয়ে সব কিছু করা হয়ে থাকে।

অন্যদিকে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান মজুমদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি দেশের বাইরে থাকায় বিষয়টি জেনে জানানোর কথা বলেন। পরে তাকে এ বিষয়ে জানতে শেয়ার বিজ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি এবং মেসেজ করা হলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো উত্তর দেননি।