তথ্য গোপন রাখতে পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী নন কোম্পানির মালিকরা

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’- পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে অনেক ভালো কোম্পানি রয়েছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির বড় অভাব। ভালো কোম্পানিগুলো বেশিরভাগই পারিবারিক মালিকানাধীন। কোনো অবস্থায় তারা মালিকানা শেয়ার করতে চায় না। এ কারণে তারা পুঁজিবাজারে ও তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী নয়। এনটিভির মার্কেটওয়াচ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টার পত্রিকার বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান ও দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন।

সাজ্জাদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা প্রয়োজন। বড় কোম্পানিগুলোকে আনার ক্ষেত্রে রেগুলেটর এবং স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশনকে উদ্যোগ নিতে হবে। বড় কোম্পানিগুলো না আসার কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে এগুলো পারিবারিক মালিকানাধীন কোম্পানি। বড় কোম্পানি সম্পর্কে বলতে গিয়ে উদাহরণস্বরূপ তিনি মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কথা বলেন। যাদের ইন্ডাস্ট্রির সংখ্যা ৩০ এবং কোম্পানির সংখ্যা ৩২। এই গ্রুপের প্রতিটি কোম্পানির পেছনে ব্যাংক লোন থাকার পরও তাদের একটিও তালিকাভুক্ত না। তিনি বলেন, হয়তো বর্তমানে সুদের হার কম কিন্তু পূর্বে ১৩ থেকে ১৬ শতাংশ সুদের হারে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে একটি কোম্পানি বড় করা হয়েছে। হয়তো কষ্ট করে কোম্পানিটিকে বড় করার ফলে যখন কোম্পানিটি একটি পর্যায়ে দাঁড়ায় তখন এখানে পাবলিককে জড়াতে চায় না। তিনি বলেন, অনেক রেগুলেটর যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এছাড়া অনেক কোম্পানি তাদের তথ্য-উপাত্তগুলো জানাতে চায় না। অনেকেই তাদের অভ্যন্তরীণ তথ্য প্রকাশে অনিচ্ছুক, যার ফলে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকারের উচিত ভালো বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে বসা।

দর বাড়লেই সংবাদ হচ্ছে কিন্তু দর কমলে সেটা সংবাদ হচ্ছে না এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  বাংলাদেশে ক্যাপিটাল মার্কেট যতটা গুরুত্ব দিয়ে কাভার করা উচিত ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তিনি বলেন, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও হয়তো ক্যাপিটাল মার্কেটের গুরুত্ব যথার্থ অনুধাবন করতে পারে না। যার ফলে সাধারণ মানুষ যারা ক্যাপিটাল মার্কেটের বাইরে তারা এটাকে একটা কারসাজির বাজার মনে করে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের রিপোর্টার তথা মিডিয়া হাউজগুলোর এই মার্কেট নিয়ে ধারণার অভাব আছে। রিপোর্টারদের উচিত কোনো রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে তার গভীরে যাওয়া।

আর্থিকখাত ও পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জাকির হোসেন বলেন, আর্থিক খাত বলতে আমরা সাধারণত ব্যাংক, ব্যাংক বহির্ভূত প্রতিষ্ঠান ও বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝে থাকি। মানি মার্কেটে সুদের হার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুদের হার অনেক কমে গেছে। মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। ঋণের ক্ষেত্রে ভালো উদ্যোক্তারা আট-নয় শতাংশও ঋণ পাচ্ছেন। যারা নিজেদের আমানত কে বিনিয়োগ হিসেবে চিন্তা করেন সেক্ষেত্রে ব্যাংকের আমানতের সুদ হার এখন মূল্যস্ফীতির নিচে নেমে আসছে। অর্থাৎ প্রকৃত সুদ হার কমে গেছে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের সুদের হারের এরকম পরিস্থিতির কারণে অনেকেই পুঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগের চিন্তা করছে।

সব সময়ই বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ থাকে বাজার একটু বাড়লেই সাংবাদিকরা এমনভাবে রিপোর্ট করে যেন এই বাজার বাড়াটাই অন্যায়। তিনি বিনিয়োগকারীদের এই অভিযোগ মানতে নারাজ। কোনো কোম্পানির দরবৃদ্ধির প্রসঙ্গে হয়তো রিপোর্ট হয়ে থাকে, অস্বাভাবিক হারে দর বাড়ছে। যদি কোনো রিপোর্টার ‘অস্বাভাবিক’ কথাটি লেখে সেক্ষেত্রে কেন অস্বাভাবিক সেই ব্যাখ্যাটি ও দিয়ে দেওয়া উচিত। পাশাপাশি ওই কোম্পানির সঙ্গে কথা বলা ও যদি সম্ভব হয় তবে রেগুলেটরদের সঙ্গে কথা বলা। তিনি মনে করেন না যে সাংবাদিকরা কোনো ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে লেখেন।

এক দর্শকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেয়ারবাজার সম্পর্কে জানার জন্য বিএসইসি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ডিএসইর ওয়েবে গেলে দেখা যাবে দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম ‘বিনিয়োগের অ আ ক খ’ প্রতিবেদন আকারে দেওয়া হয়েছে। এখানে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের প্রাথমিক ধারণা পেতে পারে। তিনি বলেন, এছাড়া বিভিন্ন চ্যানেলে পুঁজিবাজার নিয়ে আলোচনা, পত্রিকায় বিজনেস পেইজের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য খাত নিয়ে আলাদা পত্রিকাও আছে। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার জায়গা থেকে ইনপুটের কোনো কমতি আছে বলে তিনি মনে করেন না।

বড় কোম্পানিগুলো সরকার থেকেও বড় কি না যেহেতু তারা পুঁজিবাজারে আসছে না, দর্শকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা নেই যে আসতেই হবে। সুতরাং এটা কোম্পানির নিজস্ব বিষয়। যদি সরকারের বাধ্যবাধকতা থাকতো তবে এটা খতিয়ে দেখা যেতো।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০