তথ্য দিতে হবে জনগণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে

ইমদাদ ইসলাম: জনৈক আনিছুর রহমান ২৩-০৫-২০২৩ তারিখে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ৮(১) ধারা অনুসারে ভাইস চ্যান্সেলর ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আরটিআই), আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ বরাবর ২০২১ ও ২০২২ সালে কোন বিষয়ে কতজন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছেন তাদের তালিকা, তাদের কাছ থেকে কী পরিমাণ বেতন, ভর্তি ফি, সেশন চার্জ, সেমিস্টার ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি, পরীক্ষার ফি, আবাসিক হোস্টেল ফি গ্রহণ করা হয়েছে এবং ২০২১ ও ২০২২ সালের খাতওয়ারি আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণের তথ্য চেয়ে আবেদন করেন।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাচিত তথ্য না পেয়ে অভিযোগকারী ১২-০৭-২০২৩ তারিখে চেয়ারম্যান ও আপিল কর্তৃপক্ষ (আরটিআই), বোর্ড অব ট্রাস্টি, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১০০০ বরাবর আপিল আবেদন করেন। আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ১৮-০৭-২০২৩ তারিখে এইউএসটি/এম-১২/রে-১৫৭৫ নম্বর স্মারকমূলে ‘আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ দ্বারা এবং নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হওয়ায় এই বিশ্ববিদ্যালয় তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর আওতাভুক্ত নয়।

সেই কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে তথ্য চাওয়া হয়েছে তা সরবরাহ করতে বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্য নয় এবং শিক্ষার্থীর নাম, তালিকা ও পরিচিতিসহ যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় তা জনসমখে প্রকাশ করতে পারে না। এসব তথ্য প্রকাশ ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন। ফলে এই ধরনের তথ্য চাওয়া আইনের পরিপন্থি মর্মে অভিযোগকারীকে তথ্য সরবরাহে অপারগতার নোটিশ প্রেরণ করেন।’ পরবর্তী সময়ে অভিযোগকারী কোনো তথ্য না পওয়ার কারণে ২২-১০-২০২৩ তারিখে তথ্য কমিশনে অভিযোগ করেন।

তথ্য কমিশনের গত ০৩-১২-২০২৩ তারিখের সভায় অভিযোগটি পর্যালোচনান্তে শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। অভিযোগের বিষয়ে ১৫-০১-২০২৪ তারিখ নির্ধারণ করে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে (জুম অ্যাপ ব্যবহার করে) শুনানি গ্রহণের জন্য অভিযোগকারী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রতি সমন জারি করা হয়। শুনানির ধার্য তারিখে অভিযোগকারী এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আরটিআই) এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আরটিআই) এর পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবী জুম অ্যাপের মাধ্যমে সংযুক্ত হন।

শুনানিকালে অভিযোগকারী জানান, তিনি তথ্য প্রাপ্তির আবেদন করে তথ্য পাননি, একটি অপারগতার নোটিশ পেয়েছেন। আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী শুনানিকালে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ‘কর্তৃপক্ষ’ নয়। এটি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনানিয়ান্তে প্রতিপক্ষকে লিখিত বক্তব্য দাখিলের জন্য তথ্য কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয় এবং অধিকতর শুনানির জন্য পরবর্তি ৩১.০১.২০২৪ তারিখ নির্ধারণ করে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে (জুম অ্যাপ ব্যবহার করে) শুনানি গ্রহণের জন্য অভিযোগকারী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রতি সমন জারি করা হয়। শুনানির ধার্য তারিখে অভিযোগকারী এবং প্রতিপক্ষ পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আরটিআই-অ্যাপের মাধ্যমে সংযুক্ত হন। শুনানিকালে অভিযোগকারী বলেন, তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর ধারা ২(খ) এর (ই) ও (ঋ) মোতবেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কর্তৃপক্ষ হলেও তিনি তার যাচিত তথ্যসমূহ পাননি।


শুনানিকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (আরটিআই) পক্ষে নিয়োজিত বিজ্ঞ আইনজীবী জানান, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ দ্বারা এবং নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হওয়ায় এই বিশ্ববিদ্যালয় তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর আওতাভুক্ত নয়। সেই কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে যে তথ্য চাওয়া হয়েছে তা সরবরাহ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য নয় এবং শিক্ষার্থীর নাম-তালিকা ও পরিচিতিসহ যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে আইন অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয় তা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে পারে না। এসব তথ্য প্রকাশ ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন হবে। তিনি আরও নিবেদন করেন যে, তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর চৎবধসনষব এ এই আইন প্রণয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সন্নিবেশিত না থাকায় ও ওই আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পৃক্ত না হওয়ায় তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

তিনি তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর চৎবধসনষব এর চতুর্থ প্যারা উল্লেখপূর্বক কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন যে, ওই আইন ‘যেহেতু সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি ও বিদেশি অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;’ এইরূপ উল্লেখ আছে বিধায় তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।


উভয়পক্ষের উল্লিখিত বক্তব্যসহ দাখিলি কাগজাদি এবং এতদসংক্রান্ত আইনসমূহ তথ্য কমিশন কর্তৃক পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনান্তে দেখা যায় , তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ধারা-৩ অনুযায়ী এই আইনের প্রাধান্য ঘোষিত হয়েছে। ওই ধারা-৩ এ উল্লেখ আছে যে, ‘আইনের প্রাধান্য প্রচলিত অন্য কোন আইনের-(ক) তথ্য প্রদান সংক্রান্ত বিধানাবলি এই আইনের বিধানাবলি দ্বারা ক্ষুণ্ন হইবে না; এবং (খ) তথ্য প্রদানে বাধা সংক্রান্ত বিধানাবলি এই আইনের বিধানাবলির সহিত সাংঘর্ষিক হইলে, এই আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাইবে।’ এই ধারা-৩ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাষ্ট্রে প্রচলিত অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন তথ্য যাচনা সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ প্রয়োগে বাধা প্রদান করা যাবে না এবং তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগে অন্য কোনো আইনের অজুহাত প্রদর্শণপূর্বক বাধা প্রদান করা যাবে না। অধিকন্তু ‘কর্তৃপক্ষ’ বলতে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ধারা-২ (খ)(ই) তে উল্লেখ আছে যে, ‘কোন আইন দ্বারা বা উহার অধীন গঠিত কোন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোন ‘সংবিধিবদ্ধ সংস্থা’ বা ‘প্রতিষ্ঠান’ প্রতিষ্ঠিত হলে সেই ‘সংবিধিবদ্ধ সংস্থা’ বা ‘প্রতিষ্ঠান’-কে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ধারা-২ (খ) অনুযায়ী ‘কর্তৃপক্ষ’ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং সেক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ প্রয়োগ হবে।


প্রতিপক্ষের নিয়োজিত বিজ্ঞ কৌঁসুলি তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ‘লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (চৎবধসনষব)’ এর চতুর্থ প্যারার প্রতি কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দাবি করার চেষ্টা করেন, যেহেতু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কথা ওই ‘লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে’র মধ্যে সরাসরি উল্লেখ নেই সেইহেতু এই আইন তার প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এখন জানা আবশ্যক যে-‘লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (চৎবধসনষব)’ বলতে কী বোঝায়? কোন আইনে কোন বিধান সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করা থাকলে সেক্ষেত্রে চৎবধসনষব-কে প্রয়োজন অনুযায়ী ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। অধিকন্তু ওই চৎবধসনষব আইনের/ক্ষমতার উৎসও নহে আবার কোন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সেটা বাধা হিসেবেও ব্যবহার করা যায় না।
, এটাই ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর মূল স্পিরিট।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০