Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 8:39 pm

তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও সাজা হয় না কারও

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

পুঁজিবাজারে লেনদেন কম থাকলে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর অনেক সময় প্রচুর বেড়ে যায়। এতে ঝুঁকি ও লাভ দুটোই থাকে। এসইসির পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, তারা ১৭ ধারার কী কী লঙ্ঘন হলে তদন্ত করতে পারবে এবং লঙ্ঘনকারীর কী সাজা হবে। যদিও আমরা প্রচুর তদন্ত কমিটি গঠন করতে দেখি কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিরও সাজার ব্যবস্থা দেখি না। অথচ সারা পৃথিবীতে এর উল্টোটি ঘটে। জালিয়াতিমূলক লেনদেনের অভিযোগে ভারতের মতো জায়গায় শাস্তিমূলকভাবে আম্বানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তারা এক বছর বাজারে কোনো লেনদেনই করতে পারেনি। অথচ আমাদের দেশের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোনো বড় বা ছোট শেয়ারের দর বাড়লেই সতর্কবার্তা দিতে থাকে। তাহলে কি বাজারে শেয়ারের দর শুধু কমবে, বাড়বে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানের আলোচনায় এ বিষয়টি উঠে আসে। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা, সম্পাদনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহজাহান মিনা এবং আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব।
এম শাজাহান মিনা বলেন, ২০১০ সালের বাজার ধসের পর পুঁজিবাজারে যে সংস্কারমূলক কাজ হয়েছে তাতে করে সবাই ভেবেছিল বাজার হয়তো স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে। দেশের পুঁজিবাজারকে একটি ভালো অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য যা প্রয়োজন ছিল সেগুলো করা হয়েছে। তারপরও দীর্ঘদিন ধরে বাজার নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। এক-দুদিন বাড়লেও আবার নিম্ন মুখী প্রবণতায় চলে যায়। এই আচরণকে স্বাভাবিক বাজার বলা যায় না। অথচ দুঃখের বিষয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই নেই। তারা বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলেই মনে করছে এবং তারা মনে করছে পুঁজিবাজারে কোনো সমস্যাই নেই। এদিকে বিনিয়োগকারীরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাজারে ভালো বিনিয়োগ আসছে না এবং এখানে ক্যাপিটাল ইনফ্লো হচ্ছে না। আমার মনে হয় বাজারের এমন অবস্থার কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ন্ত্রণ সঠিকভাবে হচ্ছে না। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী দেশের পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক বাজার বলেই মনে করছেন। কথা হচ্ছে, তিনি এই ধারণা পেলেন কোথা থেকে? নিশ্চয়ই তাকে এই ধারণা বিএসইসি, ডিএসই অথবা সিএসই থেকে দেওয়া হয়েছে।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, পুঁজিবাজারের বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা অনেক বিষয় আধা সংশোধিত অবস্থায় রেখে দিয়েছি। বর্তমানে প্রতিনিয়ত বাজার পড়ছে এবং বাজারের টার্নওভারও অনেক কম। দেখা যায়, মার্কেটের টার্নওভার কম হলে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর অনেক সময় প্রচুর বাড়ে। এতে ঝুঁকি ও লাভ দুটোই থাকে। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের যে পথপ্রদর্শন অনুসরণ করার কথা মানে এসইসির পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, তারা ১৭ ধারার কী কী লঙ্ঘন হলে তদন্ত করতে পারবে এবং লঙ্ঘনকারীর কী সাজা হবে। যদিও আমরা প্রচুর তদন্ত কমিটি গঠন করতে দেখি কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিরও সাজার ব্যবস্থা দেখি না। অথচ সারা পৃথিবীতে এর উল্টোটি ঘটে। জালিয়াতিমূলক লেনদেনের অভিযোগে ভারতের মতো জায়গায় শাস্তিমূলকভাবে আম্বানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তারা এক বছর বাজারে কোনো লেনদেনই করতে পারেনি। কাজেই দু-একটি কোম্পানি ধরে যদি উদাহরণ তৈরি করা যায়, তাহলে আর এগুলো ঘটে না। আর বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের ক্ষেত্রেও কারসাজি হতে পারে আবার ছোট মূলধনি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও হতে পারে। কিন্তু সেটি না করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোনো বড় বা ছোট শেয়ারের দর বাড়লেই সতর্ক বার্তা দিতে থাকে। তাহলে কি বিনিয়োগকারীরা এখানে আসবে শুধু দর কমার জন্য?

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম