Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 4:32 pm

তদন্ত প্রতিবেদন জমা শর্ট সার্কিট থেকে ইসি ভবনে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচন ভবনে আগুন লাগার কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটকে চিহ্নিত করেছে ইসির তদন্ত কমিটি; এতে পৌনে চার কোটি টাকার ক্ষতির হিসাবও দিয়েছে তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীরের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির সভাপতি ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান। পরে তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ড বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে হয়েছে। এ অগ্নিকাণ্ডে তিন কোটি ৭৭ লাখ ২১ হাজার ১৬৯ টাকার পণ্য পুড়েছে।
গত রোববার রাতে ঢাকার আগারগাঁওয়ে ভবনের বেইজমেন্টে অগ্নিকাণ্ডের পর ইসি চার সদস্যের এই কমিটি গঠন করে। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
আগারগাঁওয়ে ১২ তলা নির্বাচন ভবনের বেইজমেন্টে রোববার রাতে আগুন লাগে। এতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের অন্তত দুই ডজন যন্ত্রাংশ, দুই জোড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও বৈদ্যুতিক তার এবং কিছু কাগজপত্র পুড়ে যায়।
বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল বলে ধারণা করছিলেন ইসি কর্মকর্তারা। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও তা-ই আসে। তদন্ত কমিটি প্রধান মোখলেসুর বলেন, তদন্তের প্রয়োজনে তারা বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারও নেন। বারবার সেখানে পরিদর্শন করে এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে এখানে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বেইজমেন্টের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা যায়, কক্ষের একাংশে বৈদ্যুতিক লাইনে স্ফুলিঙ্গ থেকে আগুন ধরে। এতে ইভিএমের কেব্ল ও মনিটর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন নেভানোর সময় ছিটানো পানিতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে।
বিদ্যমান ফোর্স ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি হাইটেক কক্ষগুলো সম্পূর্ণরূপে সার্বক্ষণিকভাবে সিসিটিভির আওতায় আনা, স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা চালুসহ পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রধান মোখলেসুর বলেন, যেখানে ইভিএম কাস্টমাইজড হয়ে থাকে, সেই জায়গাটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটেছিল রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে। সিসিটিভি ফুটেজে ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে ধোঁয়া দৃশ্যমান হয়। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আধা ঘণ্টার মধ্যে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
তিনি জানান, ইভিএম কাস্টমাইজ সেন্টারে সাড়ে চার হাজার ইভিএম মেশিন ছিল। পরে সেখানে যে-সংখ্যক যন্ত্রপাতি ছিল, সেগুলো গণনা করা হয়েছে।
মোখলেসুর বলেন, ‘যেহেতু অনেক পানি দেওয়া হয়েছেÑযেগুলো একেবারে ভস্মীভূত হয়েছে এবং একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে, সেগুলোকে আলাদা করেছি। যেগুলো ব্যবহার উপযোগী বা নষ্ট হয়নি, কার্টনের ভেতরে ছিল, সেগুলোকেও আলাদা করেছি। ওপরের কাচ ও দেয়ালে ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু বিল্ডিংয়ের তেমন ক্ষতি হয়নি।’
কমিটি জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে ইভিএম কন্ট্রোল ইউনিট ৫৯টি, ব্যাটারি ৪৭টি, ব্যালট ৭৮৯, মনিটর এক হাজার ২৩৩টি, তার ৫৫৭ সেট, মনিটরের ব্যাটারি ৬৪টি, ল্যাপটপ একটি ও বার কোড স্ক্যানার দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সামগ্রীর আনুমানিক দাম তিন কোটি ২১ লাখ ২৮ হাজার ৪৮৩ টাকা।
অন্যান্য কিছু ইলেকট্রনিক সামগ্রীও ছিল, তার মধ্যে এসি ৯টি, সিলিং লাইন ৪৮টি, একটি প্রজেক্টর, হুইলচেয়ার ও অটবি চেয়ার ১৬টি, টেবিল তিনটি, ঘড়ি একটি, সুইচবোর্ড ১৪টি, বিভিন্ন রকমের ৯টি প্লাগ, ওয়্যারিং চ্যানেল দুই হাজার ফিট ও ফ্লোর টাইলস ৫০টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।