প্রতিনিধি, জয়পুরহাট : জয়পুরহাটের হিমাগার ও খুচরা বাজারে বেঁধে দেয়া দরে আলু বিক্রি করতে তদারকির পাশাপাশি অভিযান জোরদার করেছে প্রশাসন। এর প্রভাবে টান পড়েছে আলুর বাজারে। হিমাগার থেকে আলু বের করছে না ব্যবসায়ীরা। কিন্তু হিমাগারে রয়েছে পর্যাপ্ত আলু। সরকারের দর বেঁধে দেয়ার বাইরে প্রতি কেজিতে নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে কৃত্রিম সংকট হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
জেলার কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় গত মৌসুমে ৩৮ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ২৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে জেলার ১৯টি হিমাগারে এক লাখ ৫০ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন আলু মজুত হয়েছে।
হিমাগারে সংরক্ষণের সময় প্রকারভেদে আট টাকা থেকে ১২ টাকা কেজি দরে কেনা পড়েছে এসব আলু। হিমাগারের ভাড়া, বস্তার মূল্য ও পরিবহন খরচ মিলে এসব আলু হিমাগার থেকে বের হচ্ছে ১৬ থেকে ২১ টাকা কেজি দরে। অথচ এক মাস ধরে এই আলু পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায় এবং খুচরা বাজারে সিন্ডিকেটের থাবায় দাম বেড়ে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেয়া পাইকারি দাম ২৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও মজুতদারদের লাভ থাকবে কেজিপ্রতি ১০-১১ টাকা। খুচরা পর্যায়েও একই লাভ থাকবে। তারপরও খুশি নন মজুতদাররা। এ অবস্থায় তারা হিমাগার থেকে আলু বের করা বন্ধ রেখে খুচরা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে বেঁধে দেয়া দাম কেউই মানছে না। বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। দেশি পাকরি (লাল) প্রতি কেজি ৬০ টাকা, স্ট্রিক ৫০ টাকা, ডায়মন্ড (সাদা) ৫০ টাকা ও ফাটা পাকরি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকার পাইকারি দাম বেঁধে দিয়েছে ২৭ টাকা এবং খুচরা ৩৬ টাকা কেজি দরে। এই দামে আলু বিক্রি করলে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে লাভ থাকবে। কিন্তু সিন্ডিকেট করে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করা হচ্ছে।
পুনট বাজারে খুচরা আলু ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন বলেন, তিন দিন ধরে হিমাগারে গিয়ে আলু পাচ্ছি না। প্রশাসনের লোকজন বলে প্রতিদিন হিমাগারে আসে, তাই মজুতদাররা আলু বের করছে না। অথচ পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু হিমাগারে আছে। যা পাওয়া যাচ্ছে, তা পরিমাণে কম। আবার দামও বেশি। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। অল্প পরিমাণ আলু আছে, এগুলো বিক্রি শেষ হলে আর বিক্রি করব না।
হিমাগার কর্তৃপক্ষরা জানায়, সরকারের দাম বেঁধে দেয়ার পরও আলুর দাম বেশি ছিল। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের অভিযানের পর হিমাগার থেকে ব্যবসায়ীরা আর আলু বের করছে না। এখনও হিমাগারে সংরক্ষণের প্রায় ৪০ শতাংশ আলু মজুত আছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ বীজ আলু আছে। আর সবই খাবার আলু।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, হিমাগার থেকে মজুতদাররা আলু বের করছে কম। এতে খুচরা বাজারে দাম কমানো যাচ্ছে না। মজুতদাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।