নিজস্ব প্রতিবেদক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছে বিএনপি। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভায় এ দাবি জানানো হয়। জনসভা থেকে দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে দুদিন জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে দলটি।
জনসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবিনামা, লক্ষ্য ও কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, আমরা সাত দফা যে দাবি দিলাম, এ দাবিতে এই কর্মসূচি দিচ্ছি। এরপর পর্যায়ক্রমে আমরা আন্দোলনকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাব। কর্মসূচি হচ্ছে আগামী ৩ অক্টোবর জেলা শহরে সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং পরদিন ৪ অক্টোবর বিভাগীয় শহরে সমাবেশ ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান।
মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এ সরকারকে বাধ্য করব দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে এবং তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে এবং আমাদের যেসব নেতাকর্মী বন্দি রয়েছেন, তাদের মুক্তি দিতে। বিএনপির সাত দফার মধ্যে রয়েছে: একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব বন্দির মামলা প্রত্যাহার করা, জাতীয় সংসদ বাতিল করতে হবে (ভোটের সময়), সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে নির্বাচকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা, নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার পর্যবেক্ষণে তাদের ওপর কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ না করা, নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করা, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মামলা প্রত্যাহার করা, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা, পুরোনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করার নিশ্চয়তা এবং কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমের স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী ও সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দেওয়া।
এক যুগ ধরে ক্ষমতাহীন বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় গেলে কী কী করবে, তার একটি ঘোষণাও দেন দলটির মহাসচিব। ঘোষিত ১২ দফা লক্ষ্যে প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসানে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের কথাও বলেছে খালেদা জিয়ার দল। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যদি জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে পারি, তাহলে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে একটি ন্যায়ভিত্তিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। এক বছর পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করল বিএনপি। এর আগের ২০১৭ সালের নভেম্বরের জনসভাটিতে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বক্তৃতা রেখেছিলেন। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ড নিয়ে বন্দি খালেদা জনসভায় না থাকলেও তার চেয়ারটি খালি রাখার পাশাপাশি সমাবেশের ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসেবে তার নামই রাখে বিএনপি।
জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে দেশনেত্রীর দেওয়া দাবিতে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক ও ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে যে, এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। আর এই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে ছাড়া কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে না, জনগণ তা হতে দেবে না। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দলীয় মনোভাবাপন্ন মানসিকতা পরিহার করে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান সাবেক এই মন্ত্রী। স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, আজকের পত্রিকায় দেখলাম, এরা (সরকার) মাঠ দখলের কথা বলেন। আমরা বলতে চাই, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি যদি প্রতিহত করেন, আমরাও আপনাদের প্রতিহত করব। এবার ছেড়ে দেব না।