Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 2:49 pm

তবুও এগিয়ে যেতে হবে!

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুগের অবসান এবং নতুন প্রজন্মের জন্য নতুনের হাতছানি। এটাই স্বাভাবিক, এটাই জীবন, যা পৃথিবীব্যাপী বহমান। একে একে পুরোনো সব ঐতিহ্য বিলীন হচ্ছে আর এ জায়গার দখল নিচ্ছে নতুন নতুন আবিষ্কার, নতুন নতুন প্রযুক্তি। নতুন প্রজন্মের জন্য নতুনের হাতছানি।

বর্তমান সময়ে বিশ্বের সর্বত্রই মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ট্যাবের ছড়াছড়ি। দেশের আঠারো কোটি জনগণের দিকে তাকালেই দেখা যাবে প্রত্যেকের হাতেই এগুলোর কোনো না কোনো একটা বিদ্যমান। প্রয়োজনে আর অপ্রয়োজনেই হোক দিন-রাতের অধিকাংশ সময় কাটছে এসব নিয়ে নাড়াচাড়া করে। ইন্টারনেট বিশ্বকে এনে দিয়েছে একেবারে হাতের মুঠোয়। প্রয়োজন শুধু মনের ইচ্ছা প্রকাশ করা আর সঙ্গে সঙ্গেই কি জানতে চাই সবই ভেসে আসে স্ক্রিনের পর্দায়। বইয়ের পর বই এখন আর লাইব্রেরিতে ঘাঁটতে হয় না। চাওয়া মাত্রই যেন সমাধান আমাদের চোখের নাগালে। এখানে কোনো বাছবিচার নেই, পুরা দিগন্তের হাতছানি। তাই নতুন প্রজন্মের জন্য নতুনের আকর্ষণ, ভালো খারাপ সবই সামনে উš§ুক্ত। এর মাঝ দিয়ে পথ চলতে হবে, নিজেদের এগিয়ে নিতে হবে উপযুক্ত গাইডের দিক নির্দেশনায়।

শিশু মন সবসময়ই নতুনের প্রতি আকৃষ্ট। এ আকর্ষণকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন গেমস ও শিশুদের পছন্দের বিষয়ে টেনে নিতে মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেটে চলে মুক্ত বিচরণ। এভাবেই এক সময় শিশুরা হয় বুলিংয়ের শিকার। অনলাইনে শিশুকে প্রলুব্ধ করা, হেয়প্রতিপন্ন করা, ভয় দেখানো, মানসিক নির্যাতন করাই হচ্ছে বুলিং। এ থেকে শিশুর মধ্যে হতাশা, হীনম্মন্যতা, লেখাপড়ার প্রতি অনীহা, ইনসমনিয়া এবং এক সময় তা অপ্রকৃতিস্থ ও আত্মহত্যার প্রবণতা সৃষ্টি করে। সাধারণত বড়রা নিজেকে আড়াল করে ছোটদের বন্ধু সেজে এ পথে এগিয়ে দেয়। ই-মেইল ও ফোন কলের মাধ্যমেও এ বুলিং হতে পারে। ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের একটি বড় অংশ এখন হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাই সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাবা-মা ই পারে সন্তানকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে। এতে সন্তানকে বিপদগামী হতে রক্ষা করতে অভিভাবকদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট জগতে না চাইলেও সামনে হাজির হয় ভালো মন্দ বহু কিছু যা আসলে দিকবিদিকশূন্য। তাই বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও সঠিকভাবে পথ চলতে গিয়ে হচ্ছে বিপথগামী। এক ধরনের আকর্ষণ তাদের নিয়ে যাচ্ছে দূরে কোথাও যা তারা কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায়, সঠিকভাবে পথ চলতে শেখায়। তাই একদিকে যেমন নতুন প্রজšে§র বিশাল অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে তেমনি আবার একশ্রেণির শিশু-কিশোরের বড়ই দুর্গতির সম্মুখীন হতে দেখা যাচ্ছে। সুন্দর আগামীর অপেক্ষায় থাকা বাবা-মা তাই অনেক সময় দিশাহারা।

কভিডকালে দুই বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ঘরবন্দি শিক্ষার্থীরা খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ট্যাবের ওপর। তাদের ঘরে বসে থাকতে বাধ্য হওয়ায় এ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। এভাবেই একে একে আমাদের সন্তানের আসক্তি বাড়তে থাকে এবং বর্তমানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে চরম অবনতির পর্যায়ে পৌঁছে যায়। যে কারণে এখন সমাজের মধ্যে চরম অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে অচিরেই।

ইদানীং শোনা যায়, ইন্টারনেট গেমসের প্রতি আসক্তি একপর্যায়ে নিয়ে গেছে মরণের সীমানায়, আত্মহত্যার কাছাকাছিও কখনোবা আত্মহত্যায়। আবারও দেখা যায় কেউ লাইভে এসে ছড়াচ্ছে আত্মহত্যার ভিডিও। এভাবে ঘটে চলেছে অকল্পনীয় কিছু ঘটনা, যা দেখার জন্য কেউ প্রস্তুত নয়, কিন্তু উপায় কী? মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে এগুলো কখনও কখনও অন্যদেরও সংক্রমিত করে। কিন্তু উপায় কী, এসব চিন্তা করে কি ইন্টারনেট থেকে, অনলাইন থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা যাবে, তাহলেই ছিটকে পড়তে হবে অগ্রগতির চলমান অভিযান থেকে।

এসবের সমাধান কী? সমাধান একটাইÑ তবুও এগিয়ে যেতে হবে, নিজের ব্যক্তিসত্তাকে জাগরিত করে, বিবেকের সঠিক সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়ে, জ্ঞানীগুণী মানুষের কাছাকাছি থেকে উপদেশ নিয়ে, সেরাদের সেরা হতে নতুন প্রজšে§র জন্য আলোর পথে। আর এ যাত্রায় পাশে দাঁড়াতে হবে বাবা-মা, গুরুজন তথা শিক্ষক সমাজকে, যারা কাছাকাছি থেকে উপদেশ দিয়েছে ইতোমধ্যে এবং আগামীতেও সঠিকভাবে পথ দেখাতে দায়িত্ব প্রাপ্ত। তবেই গড়ে উঠবে আগামীর বসবাসযোগ্য নতুন পৃথিবী নতুন আঙ্গিকে, আমরা সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম।

আবু সালেহ মোহাম্মদ মুসা

শ্যামলী, ঢাকা