Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 12:18 pm

তরমুজের উৎপাদন ভালো তবুও দাম চড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজারে উঠেছে গ্রীষ্মের ফল তরমুজ। তবে দামে অখুশি ক্রেতারা। যদিও গত বছর থেকে এ বছর তরমুজের ফলন কম হয়নি। কিন্তু দাম গত বছরের তুলনায় বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, গত বছর দেশে ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে ১৯ লাখ টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছিল। এবার জেলা পর্যায় থেকে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের খবর এসেছে। মৌসুম শেষে পুরো হিসাব পাওয়া যাবে। তবে অধিদফতরের কর্মকর্তারা চলতি মৌসুমে গত বছর থেকে বেশি জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে বলে ধারণা করছেন। এতে উৎপাদন ২০ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

অধিদফতরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মেহেদী মাসুদ বলেন, এখন বেশি বৃষ্টি হলেও তরমুজের ক্ষতি হবে না। কারণ চাষিরা সাধারণত চরের জমিতে তরমুজ চাষ করে থাকেন। সেখানে বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে না। বরং এই বৃষ্টি তরমুজের জন্য আরও ভালো হয়েছে। অনেক চাষি এখন তরমুজের জন্য এক ফুট উঁচু মাচা দেন। সে ক্ষেতগুলো তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আবার অনেক চাষি বেড করে তরমুজ করেন। তাদেরও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

তিনি জানান, টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ, সন্দ্বীপ, নোয়াখালী, ফেনীর বিভিন্ন

উপজেলা, উপকূলীয় ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনায় প্রচুর তরমুজ আবাদ হয়েছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদীর চরাঞ্চল ময়মনসিংহ, জামালপুর, গাইবান্ধা, মেহেরপুর, পাবনা, নওগাঁ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে তরমুজের ভালো ফলন হয়। তাই আগের তুলনায় কিছুটা উৎপাদন বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে আগাম আসা তরমুজের দাম বেশি হাঁকছেন রাজধানীর ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে প্রতিটি মাঝারি আকারের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়। বড় আকারের ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর রামপুরা এলাকার ফল বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, বাজারে তরমুজের দাম তুলনামূলক বেশি। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। পুরো মৌসুম আসতে আরও কয়েক দিন বাকি। তখন হয়তো দাম কিছুটা কমবে।

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দামের জন্য তরমুজ কেনায় হিড়িক এখনও পড়েনি। মৌসুমের নতুন এ ফল দামে পছন্দ না হলেও শখের বশে কিনছেন অনেকেই। কেউবা তরমুজপ্রিয়দের আবদার রক্ষায় দামের দিকে খেয়াল না করে বেশি দামে কিনছেন।

গতকাল সেগুনবাগিচায় ক্রেতা এহতেশামুল হুদা বলেন, নেহাত বাচ্চাদের কথা ভেবে নতুন তরমুজ কিনছি। না হয় তিনশ টাকায় একটি তরমুজ অনেক ব্যয়বহুল। গত বছর এ সময়ে তরমুজের দাম এত ছিল না। এ বছর আগের তুলনায় প্রতিটি তরমুজ ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি।

কারওয়ান বাজারের ফল বিক্রেতা জমির শেখ বলেন, বাজারে নতুন সব তরমুজ টেকনাফ থেকে আসছে। সেখানে প্রতি একশ তরমুজ পাইকারি ১৫ হাজার থেকে প্রকারভেদে ২৫ হাজার টাকায় কেনা। এরপর পরিবহনসহ সব খরচের পর খুচরা তা সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

এ বিষয়ে কক্সবাজার ফল দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নওশা মিয়া জানান, শহরের শতাধিক দোকানে দৈনিক পাঁচ হাজারের বেশি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। বৈশাখের আগে পর্যন্ত সমুদ্র উপকূলের এসব তরমুজই দেশের বিভিন্ন বাজারে বেশি পাওয়া যাবে। এরপর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তরমুজ আসবে। তখন দামও কমবে।

বর্তমানে থাইল্যান্ড জাতের তরমুজ সারা বছর দেশে আবাদ হচ্ছে। দক্ষিণের জেলা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, ময়মনসিংহের নি¤œাঞ্চল, চলনবিলে তরমুজ চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ তরমুজ হাইব্রিড জাতের। জাতগুলো চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ও তাইওয়ানের। এসব দেশ থেকে তরমুজের বীজ আমদানি করা হয়।