তরুণ প্রজন্মকে কোডিং ব্যবহার শিখতে হবে

আজিজুল হক : প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে পৃথিবী অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি দেশ। জনগণের দোরগোড়ায় তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন ধরনের তথ্য ও সেবার ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নিয়েছে। দারিদ্র্য, প্রশাসনিক জটিলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের মন্থর গতি প্রভৃতি দূর করার জন্য আইসিটি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বিদ্যমান জাতীয় ডেটা সেন্টারটির সক্ষমতা বাড়িয়ে সেন্টারটির ওয়েবহোস্টিং ক্ষমতা ৭৫০ টেরাবাইটে উন্নীত করা হয়েছে। দিন দিন গুরুত্ব বাড়ছে কম্পিউটার ও তাদৃশ যন্ত্রগুলোর। প্রযুক্তি ঘিরে মানবজীবনও বেশ প্রভাবিত হচ্ছে। প্রযুক্তির প্রচার-প্রসারে নতুন নতুন সফটওয়্যার, অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের ব্যবহার বাড়ছে দিন দিন, বেড়েই চলছে। তাই বর্তমান পৃথিবীতে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এবং ওয়েব-ডেভেলপিংয়ের ব্যবহারও বাড়ছে হু-হু করে। এটি বর্তমান সময়ে একটি অপরিহার্য বিষয় হিসেবে দাড়িয়েছে। প্রোগ্রামিং ও ওয়েবডেভেলপিং করা হয় কোডিংয়ের মাধ্যমে। কোডিংয়ের মাধ্যমেই মূলত আমরা কম্পিউটার সফটওয়্যার, অ্যাপস ও ভিডিও গেম তৈরি করে থাকি। বাংলাদেশেও কোডিংয়ের ব্যবহার ব্যাপক বেড়েছে। কোডিং বিষয়টি আসলে কী?

কোডিং হলো যার মাধ্যমে কম্পিউটারকে নির্দেশ দিই। একটি কম্পিউটার কী কাজ করবে, সেটা আমার কোডিংয়ের মাধ্যমে নির্দেশ দিয়ে থাকি। এককথায় বলতে গেলে, কম্পিউটারের ভাষাকে কোডিং বলে। স্যোশাল মিডিয়া, স্মার্টফোন এবং ব্লকগুলো কোড ছাড়া চলতে পারে না। আর কোড তৈরির কাজে যারা নিয়োজিত তাদের আমরা সাধারণত বলে থাকি ডেভেলপার, প্রোগ্রামার বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমরা যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সহজে খুঁজে ফেলতে পারি, খুঁজে নিতে পারি কোম্পানি ধরন, ঠিকানা, সুবিধা কিংবা অসুবিধা ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইট তৈরিকারী ডেভেলপারদের চাহিদা বাড়ছে তুলনামূলকভাবে বেশি। প্রযুক্তিগত প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটার ভিডিও গেমস স্থান পাচ্ছে অনলাইনে। হাতের নাগালে থাকায় বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে এসব গেমস খেলা যাচ্ছে। তাই এসব অনলাইন ভিডিও গেমেসের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার বদৌলতে গেমস তৈরির কোম্পানিগুলোয় প্রোগ্রামারদের অগ্রাধিকার সর্বাধিক। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। দিনের বেশির ভাগ সময় আমরা স্মার্ট ডিভাইসে কাটাই, সেই সময়টা জুড়ে থাকে মোবাইল অ্যাপ। এসব অ্যাপের মাধ্যমে আমরা দৈনন্দিন অনেক কাজ সম্পন্ন করে থাকি। জীবনকে সহজ করে তোলায় এসব অ্যাপ ডেভেলপারদের মান দিন দিন বেড়েই চলেছে। মেশিনকে মানুষের মতো বুদ্ধিমান করে তোলার মহাযজ্ঞ চলছে সারাবিশ্বে। আর এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করা প্রোগ্রামারদের চাহিদা খুব বেশি। চাহিদা বাড়ছে লজিক্যাল সেন্স ডেভেলপ করতে ডেভেলপরদের। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষিত বাংলাদেশে ডেভেলপার, প্রোগ্রামার এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা খুবই কম। ভালো প্রোগ্রামারদের চাহিদা অনুযায়ী কাজের ক্ষেত্রটি খুবই সীমিত, যার কারণে দেশের প্রোগ্রামাররা বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন।

উন্নত বিশ্বে প্রোগ্রামারের চাহিদা খুব বেশি। তারা এই জায়গায় খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা বুঝে গেছে প্রযুক্তির হাতে থাকা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে ভালো মানের আইটি সেক্টর বা সফটওয়্যার কোম্পানি খুবই কম। গুটিকয়েক যে কোম্পানি রয়েছে, সেগুলোয় আবার বাইরের দেশ থেকে প্রোগ্রামার বা ডেভেলপার ভাড়া করে আনা হয়। বাইরে থেকে প্রোগ্রামার বা ডেভেলপার ভাড়া করায় দেশীয় প্রোগ্রামারদের কাজের সুযোগ কমে যাচ্ছে। তাছাড়া ভালো প্রোগ্রামার বা ডেভেলপার দেশে না থাকার বড় একটি কারণ হলো ভালো বেতন স্কেল বা অন্য সুবিধাগুলো না থাকা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সম্ভাবনার দ্বার উম্মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও প্রোগ্রামিং শিক্ষায় উৎসাহ দিতে ‘আওয়ার অব কোড’ নামে বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে। এই আয়োজনগুলোয় বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয়। ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (আইসিপিসি) একটি বহুজাতিক দলভিত্তিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায়ও বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অংশ নেয়। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রোগ্রামিং আসর ‘অ্যাসোসিয়েশন অব কম্পিউটিং মেশিনারি-ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা (এসিএম-আইসিপিসি)। এই আসরের বাংলাদেশের প্রোগ্রামাররা তাদের অবস্থান জানান দিয়ে যাচ্ছে বারবার। ‘স্টেট অব দ্য ডেভেলপার ন্যাশন’-এর রিপোর্টের ২০ সংস্করণ অনুসারে ২০২১ সালে সফটওয়্যার ডেভেলপারের সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৬৮ লাখ। এর মধ্যে ২০১৯ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে ছিল ৪৪ লাখ এবং ২০১৮ সাল নাগাদ ইউরোপে ছিল ৫৫ লাখ। বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, ২০৩০ সালে সফটওয়্যার ডেভেলপারের সংখ্যা চার কোটি ৫০ লাখে দাঁড়াবে। বিশ্বের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশে প্রোগ্রামের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তরুণ প্রজš§কে প্রোগ্রামিং করতে আগ্রহী করতে হবে। দেশে অবস্থানরত প্রোগ্রামারদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

শিক্ষার্থী, সমাজতত্ত্ব বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০