মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প

তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ

বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর: চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় প্রবল ভারী বর্ষণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ফের জলাবদ্ধ হয়েছে। ভারী বর্ষণের ফলে বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। পুকুর ডুবে মাছ ভেসে গেছে। ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট পানির নিচে থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কৃষকদের রোপা আমন এখন পানির নিচে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা হলে এ ক্ষতি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

অভিযোগ রয়েছে, মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পটি এখন কৃষকের জন্য আশীর্বাদের বদলে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতার কারণে মারাত্মক ক্ষতিতে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ না নেয়ায় প্রতি বছর জলাবদ্ধতায় প্রকল্পের হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।

গত শনিবার থেকে প্রবল ভারী বর্ষণের কারণে পানি নিষ্কাশনে নানা প্রতিবন্ধকতায় জলাবদ্ধ হওয়ায় আবার কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা ও খালের জায়গা দখল, ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা হয়েছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও মৎস্য খামার।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে আবাদযোগ্য জমি ১৪.১ হেক্টর। প্রকল্পটি ধনাগোদা নদীর পাশে। ধনাগোদার পানি পাম্পের সাহায্যে মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯,০২১ হেক্টর জমির বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন এবং ১৪,৪০০ হেক্টর এলাকার জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

সেচ এলাকায় বছরজুড়ে বোরো, আউশ ও আমন আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে কৃষকের রোপণকৃত আমন জলাবদ্ধতার কারণে পানিতে তলিয়ে গেছে। আবাদকৃত ধান ক্ষেত কয়েক ফুট পানির নিচে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা হলে বিরাট ক্ষতিতে পড়বেন কৃষকরা। জলাবদ্ধতায় অনেকটা হতাশার মধ্যে রয়েছেন হাজার কৃষক।

ভারী বর্ষণে উপজেলার শিকিরচর, পালালোকদী, ঠাকুরচর, আদুরভিটি, হানিরপাড়, মিলারচর, তালতলী, ঘনিয়ারপাড়, ঝিনাইয়া, বড়মরাধন, ওটারচর কলাকান্দা, ছেংগারচর, ইসলামাবাদ, দুর্গাপুর, লতরদি, এখলাছপুর, ফতেপুর, লুধুয়া ও গজরাসহ একাধিক এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে ঘরবন্দি হাজার মানুষ।

উপজেলার জোরখালী গ্রামের মাছ কৃষক হাজী বাবুল হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে ভেসে গেছে বেশিরভাগ পুকুর ও ঘেরের মাছ। বীজতলাসহ ফসল পানির নিচে। স্থানীয় কৃষকদের দুঃখের শেষ নেই। অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে কৃষকদের।

উপজেলার গজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মো. হানিফ দর্জি জানান, বৃষ্টির কারণে চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে। বৃষ্টির পানি সহজ উপায়ে বের হওয়ার সুযোগ না থাকায় হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সরকার মো. আলাউদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, শনিবার থেকে ভারী বর্ষণে সেচ প্রকল্প এলাকায় জলাবদ্ধ হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি নিষ্কাশন করতে উদমদি পাম্প হাউসে ছয়টি পাম্পের মধ্যে চারটি পাম্প চলমান। এছাড়া কালীপুরে চারটি পাম্পের মধ্যে দুটি পাম্প সার্বক্ষণিক চলমান। সেচ প্রকল্প এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা কাজ করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, গত মাসে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবার নতুন আবাদ করেছে। শনিবার থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে কিছু সংখ্যক ফসল ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। সেচ কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য আমরা অনুরোধ করেছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী শরিফুল হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, আমি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি। পাউবোর নিষ্কাশন খালগুলো সংস্কার করাই জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল উপায়। আমি এ বিষয়ে পাউবো কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০