Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 10:52 am

তহবিলের আকার বেড়ে ৮ হাজার ৩০২ কোটি টাকা

শেখ শাফায়াত হোসেন: চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিলের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৩০২ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ৩০ জুন এ তহবিলে মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৯৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আমানত বিমা তহবিলের সম্পদ বেড়েছে এক হাজার ২০৮ কোটি টাকা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি সিকিউরিটিজ ও অন্যান্য খাতে আমানত বিমা তহবিলের বিনিয়োগ থেকে সুদ বাবদ আয় হয়েছে ৬৩৪ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই তহবিলের সুদ আয় ছিল ৫৬২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিলের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ১৯৮৪ সালের আগস্টে দেশে প্রথম আমানত বিমা চালু হয়। ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত বিমা পদ্ধতি চালুর প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ পদ্ধতিটি আমানতকারীদের নিয়েই কাজ করে, তবে প্রিমিয়ার দেয় ব্যাংকগুলো। ওই বছরের ১১ আগস্ট ‘ব্যাংক আমানত বিমা অধ্যাদেশ ১৯৮৪’ নামে একটি আইনি কাঠামো দাঁড় করিয়ে সরকার স্কিম আকারে আমানত বিমা চালু করে। ২০০০ সালের জুলাইয়ে একটি আইন দ্বারা অধ্যাদেশটি প্রতিস্থাপন করা হয়। এই আইনটিকে বলা হয় ‘ব্যাংক আমানত বিমা আইন ২০০০’। আর বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক আমানত বিমা অ্যাসোসিয়েশনের (আইএডিএ) সদস্য পদ পায় ২০০৬ সালে।

বিদেশি ব্যাংকসহ সবগুলো তফসিলি ব্যাংকই আমানত বিমার অন্তর্ভুক্ত। আইন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৬০টি ব্যাংক আমানত বিমা স্কিমের মধ্যে রয়েছে। এই বিমার প্রিমিয়াম ব্যাংকগুলোর কাছ থেকেই আদায় করা হয়। আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিলে ওই অর্থ গচ্ছিত থাকে। তহবিলটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তহবিলের টাকা সরকারি সিকিউরিটিজ ও অন্যান্য আয়বর্ধক খাতে বিনিয়োগ করা হয়, যা তহবিলের আকার বাড়াতে এবং বিমার আচ্ছাদন বাড়াতে সহযোগিতা করছে বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিমার আওতায় থাকা কোনো ব্যাংক অবসায়িত হলে আমানত বিমা আইনের বিধান অনুযায়ী, ওই ব্যাংকের প্রত্যেক আমানতকারী সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা পদাধিকার বলে আমানত বিমা তহবিলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে কাজ করেন।

বিমার আওতায় থাকা ব্যাংকগুলো বছরে দুবার প্রিমিয়াম জমা দেয়। ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত বিমার হার সব ব্যাংকের জন্যই সমান ছিল। তবে বর্তমানে ঝুঁকিভিত্তিক প্রিমিয়াম হার চালু রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও সব সূচকে ভালো বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য বিমা প্রিমিয়াম শূন্য দশমিক শূন্য আট শতাংশ চালু রয়েছে। আর্লি ওয়ার্নিং স্টেজে থাকা ব্যাংকের প্রিমিয়ার হার শূন্য দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং প্রবলেম ব্যাংকগুলোর প্রিমিয়াম হার শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ।

বর্তমানে দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত সংগ্রহ করলেও আইনগত সংস্কারের অভাবে এ খাতের আমানতকারীরা এই বিমার সুফল পাচ্ছে না। এ কারণে গত নভেম্বরে প্যানেল আইনজীবীদের মতামত নিয়ে ‘আমানত সুরক্ষা আইন’ নামে আগের আইন প্রতিস্থাপন করে নতুন একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত নভেম্বরে এই আইনের প্রস্তাবনার খসড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স বিভাগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে সময়ে সময়ে আমানত বিমার কাভারেজের সীমা বাড়ানোর ক্ষমতা এ-সংক্রান্ত তহবিলের ট্রাস্টি বোর্ডের হাতে ন্যস্ত করার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। আইনটি বাস্তবায়ন করা গেলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরাও বিমার আওতায় চলে আসবে।’

দীর্ঘদিন ধরেই আমানত বিমার কাভারেজ দুই লাখ টাকা করার দাবি ছিল। তবে আইন সংশোধনের অভাবে কাভারেজ বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংক আমানতের ৯৩ শতাংশ বিমা কাভারেজের আওতায় রয়েছে। আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিলের অর্থ দিয়েই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও আইন জারির পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যাংককে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়নি।