তহবিল সংকটে নির্দেশনা নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান

শেখ আবু তালেব: লেনদেন কমে যাওয়ার পাশাপাশি পতন ঘটছে সূচক। শেয়ারের বিক্রেতা পাওয়া গেলেও ক্রেতার সংকট রয়েছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে তারল্য সংকট। এজন্য ব্রোকারেজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে বিনিয়োগ বাড়াতে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ২০ মার্চের মধ্যে বিনিয়োগ পরিস্থিতি জানাতে বলা হয়েছে।

যদিও গতকাল দেয়া চিঠি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা। তারা বলছেন, এমন চিঠি দেয়া অনৈতিক। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বলাটাই যৌক্তিক নয়। অর্থ ও সুযোগ থাকলে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্যই বিনিয়োগ বাড়াবে। এজন্য চিঠি বা মৌখিক নির্দেশনার প্রয়োজন নেই।

অন্যদিকে এমন উদ্যোগকে ভিন্নভাবে দেখছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তারা মনে করছেন, পুঁজিবাজার হতে হয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকেন্দ্রিক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যক্তি বিনিয়োগই ৮০ শতাংশ। এ থেকে বেরিয়ে আসতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। এজন্য সুযোগ থাকলে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্যই চিঠি দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা কাউকে বাধ্য করছি না। মূলত বাজারকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগনির্ভর করতে এমন উদ্যোগ। বর্তমান বাজারে যাদের সুযোগ রয়েছে, তারা যেন বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন, এজন্যই চিঠি দেয়া। অনেকেরই সুযোগ রয়েছে বিনিয়োগ বাড়ানোর।’

সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টে বিনিয়োগের পরিমাণ সম্পর্কিত একটি তথ্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) দিয়েছে বিএসইসি। সেই প্রতিবেদনে কোন প্রতিষ্ঠানের ডিলার হিসাবসহ বিনিয়োগের বিবরণ রয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ পরিস্থিতি কেমন।

বিএসইসির কাছ থেকে এমন প্রতিবেদন পেয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছে ডিএসই। সেই চিঠিতে ডিলার হিসাব থেকেও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে।

রমজান উপলক্ষে লেনদেন বেলা ২টায় শেষ হয়। ডিএসইর এমন চিঠিটি গতকাল বিকেল ৪টার পর দেয়া হয়। তবে চিঠিপ্রাপ্তির পর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘রমজান মাসে এমনিতেই লেনদেন কম থাকে। অতীতেও তা দেখা গিয়েছে। ঈদ ছুটির পূর্ব পর্যন্ত আর মাত্র ৮ কার্যদিবস রয়েছে। এর মধ্যে ২০ মার্চের মধ্যে বিনিয়োগ বাড়ানো কীভাবে সম্ভব। যাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে, তারা তো কারও জন্য অপেক্ষা করবে না। বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চিঠি অনভিপ্রেত।’

এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘গত ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো কমিটমেন্ট দেয়া হয়নি। আমরা বলেছি, যাদের সুযোগ রয়েছে, তারা বিনিয়োগ বাড়াবে। আমাদের কাছে তো অর্থ নেই, যে নতুন করে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ বাড়াব। আমরা তো ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগের বিপরীতে সাড়ে তিন কোটি টাকা পেয়েছি, তাও তো প্রায় সবাই বিনিয়োগ করেছে।’

প্রসঙ্গত, লেনদেন খরায় চলতে থাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ টানতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে রয়েছে বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ। এজন্য যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ করার সক্ষমতা রয়েছে, তাদের নির্দিষ্ট করে চিঠি দিয়েছে সম্প্রতি। একই চিঠি দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু গত এক মাসে নেয়া সেসব উদ্যোগের দৃশ্যমান কোনো প্রভাব ফেলছে না বাজারে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০