আবিদ হোসেন, গাজীপুর: গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেলে রি-অ্যাজেন্ট না থাকায় চার মাস ধরে হাসপাতালের ল্যাবে সিরাম ইলেকট্রোলাইট ও ট্রপোনিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আট ধরনের পরীক্ষা হচ্ছে না। এতে চিকিৎসকদের প্রেসক্রাইব করা এসব পরীক্ষা বাইরে থেকে করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ নানা ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বাইরে থেকে এসব পরীক্ষা করার জন্য তাদের অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগী স্থানীয় মানুষের দাবি, দ্রুত এসব যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেলের টেকনোলজিস্ট মোমেন হোসেন মোল্লা জানান, প্রায় চার মাস ধরে রি-অ্যাজেন্ট সংকট থাকায় সিরাম ইলেকট্রোলাইট, ট্রপোনিন, টিএসবি, টি-৩, টি-৪, এফএসএইচ ও এলএইচসহ গুরুত্বপূর্ণ আটটি পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালেও এখনও এ সংকট দূর হয়নি। হাসপাতালে ট্রপোনিন পরীক্ষার জন্য ৩০০ টাকা এবং ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষার জন্য ২০০ টাকা লাগে। কিন্তু অন্য কোনো প্রাইভেট মেডিকেলে এ পরীক্ষার জন্য যথাক্রমে এক হাজার ৩০০ ও এক হাজার ২০০ টাকা নেয়া হয়।
সম্প্রতি হƒদরোগ, কিডনি ও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত মহানগরের ভোগড়া এলাকার বছিরন নেছা (৫০) হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ইলেকট্রোলাইটসহ কয়েকটি পরীক্ষা করাতে বলেন। তিনি জানান, আগে এসব পরীক্ষা অল্প খরচে হাসপাতালে করা গেলেও বর্তমানে এখানে পরীক্ষা (টেস্ট) বন্ধ থাকায় প্রায় ১০ গুণ বেশি খরচে বাইরে থেকে করতে হয়েছে।
এ বিষয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক তপন কান্তি সরকার ওই সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, এ মেডিকেল কলেজ প্রকল্পের তৎকালীন পরিচালকের মাধ্যমে হাসপাতাল ল্যাবে এসব পরীক্ষার যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও রি-অ্যাজেন্ট সরবরাহ করা হয়েছে। এ সময় চুক্তি মোতাবেক আমাদের ল্যাবে তিন বছর পর্যন্ত এসব পরীক্ষার রি-অ্যাজেন্ট সরবরাহের কথা থাকলেও গত জুলাইয়ের শেষে থেকে তারা রি-অ্যাজেন্ট সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এতে রি-অ্যাজেন্ট সংকট দেখা দিলে কয়েক মাস ধরে হাসপাতালের ল্যাবে কয়েকটি পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে নিজস্বভাবে এসব কেনার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালক মো. আসাদ হোসেন অবৈধভাবে মেডিকেলের নামে ক্রয় করা ওইসব যন্ত্রপাতি ও রি-অ্যাজেন্ট নিজস্ব উদ্যোগে হাসপাতালে সরবরাহ করেন, যার অডিট আপত্তির পর তদন্তও হচ্ছে। তবে হাসপাতাল পরিচালক উদ্যোগ নিলে ওইসব যন্ত্রপাতি ও রি-অ্যাজেন্ট কেনা অসম্ভব নয়।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালক মো. আসাদ হোসেন জানান, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং একই সরকারের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রোগীরা হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেবা পাচ্ছিলেন না। আমি সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ থেকে মানবিক কারণে কিছু যন্ত্রপাতি ও রি-অ্যাজেন্ট ওই হাসপাতালে সরবরাহ করেছি। বর্তমান পরিচালকের উচিত ছিল ওইসব রি-অ্যাজেন্ট ক্রয় করে তা সচল রাখা। তা না করে উল্টো আমার ওপর দোষ চাপানোর ষড়যন্ত্র চলছে। ওইসব তো আমি আমার ও নিজের আত্মীয়স্বজনদের জন্য করিনি।