Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 8:48 pm

তাজরীন ফ্যাশন শ্রমিকদের পুনর্বাসনে উদ্যোগ নিন

 

বাংলাদেশের পোশাক খাতের অন্যতম বড় দুর্ঘটনা তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ১১ বছর পূর্তি হয়েছে গত শুক্রবার। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর রাজধানী উপকণ্ঠে সাভারের নিশ্চিন্তপুরের এই পোশাক কারখানাটিতে যে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়, তাতে কারখানার মধ্যে দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন ১১২ জন শ্রমিক; আহত হয়েছিলেন অনেক মানুষ।

অগ্নিকাণ্ডের বছরপূর্তির দিনে প্রতি বছরই নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনসের সামনে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকরা সমাবেশ করেন। প্রতি বছরই শোনা যায় এক কথা, তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এবং দীর্ঘমেয়াদে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কিন্তু সরকার এবং পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ দাবি করছে, বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। বাস্তবতা হলো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দুর্দশা কমেনি এখনও।

তাজরীন ফ্যাশনসের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ১১ বছর পূর্তির দিনে শুক্রবার সকালে নিহতদের শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ করে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ শ্রমিকরা। তারা তাজরীন ফ্যাশনস ভবনের সামনে ফুল দিয়ে নিহতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গতকাল শেয়ার বিজে ‘তাজরীন ফ্যাশনের কর্মীদের আক্ষেপ: আমরা আহত তাই কেউ চাকরিতে নেয় না’ শীর্ষক প্রতিবেদনে শ্রমিকের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা উঠে এসেছে। ওই অগ্নিকাণ্ডে ১১২ পোশাকশ্রমিক নিহত হন, আর আহত হন শতাধিক শ্রমিক, যাদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। যারা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের জীবন আরও বিষাদময়। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও অনেকের ভাগ্যে আর চাকরি জোটেনি। তাজরীনের শ্রমিক নাসিমা আক্তার সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও শরীরে দুর্বিষহ যন্ত্রণা তার নিত্যসঙ্গী। নাসিমা বলেন, ‘আমার মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙা। আমি যত দিন বেঁচে থাকব তত দিন পঙ্গুত্ব নিয়ে বাঁচতে হবে। বর্তমানে আমি একটি ঝুটের গোডাউনে দিনে দৈনিক ২০০ টাকায় কাজ করি। সেখানে যেতে আমি বাধ্য হয়েছি, কারণ আমার চাকরি হচ্ছিল না। আমি অনেক ফ্যাক্টরির সামনে গিয়েছি, কেউ আমাকে চাকরি দেয়নি।’

শ্রমিক নাসিমা আক্তার এবং তার মতো অন্য শ্রমিকদের আক্ষেপ থেকেই প্রমাণ হয় তারা যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাননি এবং তাদের পুনর্বাসনেও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিকলাঙ্গ হওয়া শ্রমিকরা ১১ বছরেও আঘাতের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন শরীরে, যে কারণে কোনো কাজকর্মও করতে পারেন না; ফলে আয়-রোজগারও নেই।  চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেককেই সারাজীবনই এসব আঘাতের চিকিৎসা করিয়ে যেতে হবে তাকে।

জীবন যুদ্ধে টানাপোড়েনের মর্মন্তুদ কাহিনি সাধারণ মানুষকে আপ্লুত করে শিল্পমালিকদের মানবতা রোধে জাগ্রত করে না। একজন শ্রমিক যখন বলেন, ‘এত বছর হয়ে গেছে, হয়তো তাজরীনের আগুন নিভে গেছে, আমাদের মনের আগুন নিভে নাই। কারণ আমরা ধুঁকে ধুঁকে মরার চাইতে, ওইখানে মরলে তাও আমরা শহিদি মরা হইতাম।’ আরেকজন বলেন, ‘এখন যে জীবনটা কাটতেছে এইটা মানুষের করুণার জীবন, এইটাকে জীবন বলে না। না কোনো কাজ করতে পারতেসি, পোলাপান লেখাপড়া করতে দিতে পারতেছি না, কোনো কিছুই করতে পারতেছি না, এইটারে জীবন বলে না। এই হতদরিদ্র মানুষ যাতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে, সে জন্য রাষ্ট্রকেই পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের  মনে রাখতে হবে শত শত জীববৃন্ত মানুষ ভিক্ষা করেনি, অসৎ উপায়ে বাঁচতে চায়নি; তারা শ্রম ও ঘাম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে চেয়েছে।’