নিজস্ব প্রতিবেদক : রোজার সময় সবজির বাজার কিছুটা স্বস্তিদায়ক থাকলেও ঈদের পর দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। চলমান তাপদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন বেড়েই চলছে সবজির দাম। দাবদাহে এমনিতেই বিপর্যস্ত জনজীবন, তার ওপর চড়া সবজির বাজার এখন সাধারণ মানুষকে আরও নাজেহাল করে তুলছে। বাজার করতে আসা সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, প্রকৃতি যেমন তাদের স্বস্তি দিচ্ছে না, একই সঙ্গে স্বস্তি দিচ্ছে না বাজার পরিস্থিতিও। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, তীব্র গরমের কারণে সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে দাম বাড়ছে। গরম না কমলে দাম আরও বাড়তে পারে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় ঊর্ধ্বমুখী বাজারের
এ চিত্র।
প্রকৃতিতে যেমন দাবদাহ চলছে তেমনি কাঁচা বাজারেও যেন আগুন। প্রতিনিয়তই বাড়ছে সব ধরনের সবজির দাম। সব সবজির দাম বাড়লেও গরমে চাহিদা থাকে বেশি এমন সবজির দাম বেড়েছে উচ্চহারে।
বাজার করতে আসা সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, প্রকৃতি যেমন তাদের স্বস্তি দিচ্ছে না, একই সঙ্গে স্বস্তি দিচ্ছে না বাজার পরিস্থিতিও
গতকাল বাজারে টমেটো ৬০ টাকা, টক টমেটো ৭০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকা, পটোল ৮০-১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, সজনে ১০০-১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০-৮০ টাকা, চালকুমড়া ৬০-৮০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা করে।
এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। আর উচ্ছে, শসা, লেবু, ঢ্যাঁড়স, পটোল, চালকুমড়ার মতো সবজির চাহিদা গরমে থাকে বেশি। তাই এগুলোর দামও বেড়েছে বেশি। প্রতি কেজিতে উচ্ছে ২০ টাকা, শসা ২০, ঢ্যাঁড়স ৩০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা বেড়েছে। আর প্রতি হালিতে লেবুর দাম ১০ টাকা এবং প্রতি পিস চালকুমড়ার দাম ২০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া প্রতি কেজিতে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ২০ টাকা এবং ধনেপাতার দাম বেড়েছে ৪০ টাকা।
বাজার করতে এসেছিলেন ফারহান হোসেন। তিনি বলেন, বাইরে যেমন গরম বাজারে সবজির দামেও গরম। কোনো দিকেই শান্তি নেই।
আরেক ক্রেতা সারোয়ার হোসেন বলেন, সবজির দাম যে হারে বাড়ছে কয়দিন পরে বেতন পেয়ে বাসায় যাওয়া লাগবে না। সব টাকা বাজারে দিয়ে যেতে হবে।
গরমে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই এখন সবজির দাম বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে। এমনভাবেই বলছিলেন সবজি বিক্রেতা রাজিব।
এদিকে গতকাল বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৫০ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১৬০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা। আর চায়না আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
এছাড়া বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৪০০-১৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০-৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৩৮০-৫৫০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ৩০০-৫০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০-১১০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০- ১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম এখনও দুইশ টাকার নিচে নামেনি। আর প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে কক মুরগির দাম। আজকে ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ২০০-২০৫ টাকা, কক মুরগি ৩৫০-৩৭০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩১৫-৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মুরগির লাল ডিম ১১৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১০৫-১১০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে।
সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলেও মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। প্যাকেট পোলাউয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাউয়ের চাল মান ভেদে ১১০-১৪০ টাকা, ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৯০ টাকা, খেসারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।