নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতীক নিয়ে প্রচারের তৃতীয় দিনেই প্রচার মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠেছে। দুই সিটি করপোরেশনের তিন প্রার্থী (তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন ও শেখ ফজলে নূর তাপস) এ অভিযোগ করেছেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। শুধু উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, রোববার দুপুরে মিরপুর-১ নম্বরের উত্তর বিশিলে শাহ আলী মাজারের সামনে পুলিশের সামনেই তার প্রচার মিছিলে হামলা করেছে ‘ক্ষমতাসীন দলের’ কর্মীরা।
অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেছেন, তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে সরকারদলীয়রা। নির্বাচনে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি। আর আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস অভিযোগ করেন, শনিবার সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণ মিশন রোডে তার গণসংযোগে ‘হামলা করেছে’ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কর্মীরা।
গতকাল তাবিথ আউয়াল সকালে মিরপুরে শাহ আলীর মাজার জিয়ারতের পর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় মাজারের সামনেই দুটি পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ওই হামলার জন্য আওয়ামী লীগ কর্মীদের দায়ী করে তাবিথ বলেন, ‘শাহ আলী মাজারের সামনে প্রচারের সময় জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়। পুলিশের সামনেই আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে হামলার আশঙ্কায় আমি নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিলাম। তখন আমাকে পুলিশ প্রটেকশন দিয়েছিল। কিন্তু এবার পুলিশের সামনেই হামলার শিকার হলাম।’ আক্রান্ত হলেও শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার চালিয়ে যাবেন বলে জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল।
এদিকে রোববার পুরান ঢাকার দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরুর আগে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় আমার গোপীবাগের বাসার সামনে সরকারদলীয় লোকজন গিয়ে আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর চড়াও হয়েছে, হামলা করেছে। এটা কি সুষ্ঠু নির্বাচনের আচরণ?’ তার বাসার সামনে থাকা কয়েকটি গাড়ির কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ মেয়র ও সংসদ সদস্য সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাকের নিজের প্রচারণায় এখনও কোনো বাধা দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদিও আমাকে এখনও প্রচারে বাধা দেওয়া হয়নি, তবে আমার দলের কাউন্সিলর ও সমর্থকদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারে ওরা বাধা দিচ্ছে, প্রচার চালাতে দিচ্ছে না। এ থেকেই প্রমাণ হয়, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। নির্বাচনে অবশ্যই সব প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।’
অন্যদিকে দক্ষিণে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফজলে নূর তাপস শান্তিনগর কাঁচাবাজার থেকে তৃতীয় দিনের নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগে সাংবাদিকদের সামনে হামলার অভিযোগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘শনিবার আরকে মিশন রোডে নির্বাচনী প্রচারের এক পর্যায়ে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাসাতেও আমি গিয়েছি। সেখানে সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, ভোট প্রার্থনা করেছি; কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমরা সেখান থেকে চলে আসার পর সন্ধ্যার দিকে তারা অতর্কিতে আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীসহ গণসংযোগে যারা ছিলেন, তাদের ওপর হামলা করেছে। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।’
যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা ফজলুল হক মণির ছেলে তাপস বলেন, ‘আমরা চাই সম্প্রীতির রাজনীতি, পরিবর্তনের রাজনীতি। আমরা এ রাজনীতির সূচনা করতে চাই। আমরা আশা করব, সবাই আমার সঙ্গে সেই সূচনায় অংশগ্রহণ করবেন। আমরা একটি সুন্দর, সম্প্রীতির রাজনীতি ঢাকাবাসীকে উপহার দেব।’
এ বিষয়ে জনগণের কাছ থেকে ‘স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া’ পাচ্ছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘যে পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি, আমাদের প্রাণের ঢাকা, ভালোবাসার ঢাকাকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা, সর্বোপরি উন্নত ঢাকা গড়ে তোলার জন্য ঢাকাবাসী সেটা সাদরে গ্রহণ করেছে। এজন্য স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। আমরা খুবই আশাবাদী যে, ঢাকাবাসী আমাদের পক্ষে রায় দেবেন।’