নিজস্ব প্রতিবেদক: জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা জরুরি। সেই লক্ষ্যে সব পর্যায়ে সমন্বিত জোর প্রচারণা চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং’ আয়োজিত ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন এবং অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) প্রতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এসব কথা উঠে আসে।
আয়োজনে ফোরামের চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাতের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ ঘটে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে; যার জন্য মূলত দায়ী তামাকপণ্য। দেশের তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো তামাকপণ্য ব্যবহার করে। বছরে প্রায় ৬১ হাজার শিশু ধূমপান না করেও তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে মৃত্যুবরণ করেন এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ। তামাকের এই ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের কোনো বিকল্প নেই।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশে ধূমপান পার্সেন্টেজ অনুযায়ী অনেকটা কমেছে। আমি খুবই আনন্দিত যে একটা পার্লামেন্টারি ফোরাম হয়েছে, যারা এগুলো নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। এটা কিন্তু আর বেশি দূরে নয়। যদি ক্যাম্পেইনটা ঠিকমতো না হয়, যদি আইনের প্রয়োগটা ঠিকমতো না হয় তাহলে আমরা লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবো। তথ্য মন্ত্রণালয় তামাকবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি গণমাধ্যমকেও এগিয়ে আসতে হবে। সমন্বিতভাবে এ নিয়ে ক্যাম্পেইন চালাতে পারলে আমরা লক্ষ্য অর্জনে সফল হবো। আমি মনে করি, তামাক নিয়ন্ত্রণে জোর প্রচারণা দরকার।’
আ ফ ম রুহুল হক বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে তামাকের বিরুদ্ধে যেভাবে কাজ করছি, তাতে অবশ্যই আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সফল হবো। আমি ধন্যবাদ জানাই তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোকে। তারা অনেক কাজ করছেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা যেভাবে এগিয়ে আসছেন তাতে আমি আনন্দিত। তবে আইন সংশোধনের মাধ্যমে স্কুলের আশপাশে সিগারেটসহ সব ধরনের তামাকপণ্য বিক্রি বন্ধ করা জরুরি। ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে। অনেকে মনে করেন, ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর। কিন্তু এটা ভুল। এটাও সমানভাবেই ক্ষতি করে। আমরা সবাই জানি, দেশে অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের দিক থেকে আমরা নেতিবাচক অবস্থানে আছি। আমাদের সার্বিক জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য হলেও তামাক নিয়ন্ত্রণ জরুরি।’
বেগম মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘আমাদের এখানে আজ এক হয়েছি এমন একটি সামাজিক সমস্যার বিষয়ে কথা বলতে, যার শেষ হলো মৃত্যু দিয়ে। যার মাধ্যমে সামাজিক, পারিবারিক সকলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সেটা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর তামাক। তামাকের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে এক হতে হবে। জাতীয় সংসদে আমাদের সবাইকে তামাকের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। আমরা যারা সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধি আছি, তাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এ বিষয়ে কাজ করতে হবে।’
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম বলেন, ‘তামাক নিয়ে কাজ করাটা কেবল আমাদের দাপ্তরিক দায়িত্ব নয়, বরং নৈতিক দায়িত্ব। আমরা প্রায় সবগুলো সুপারিশকৃত সংশোধনগুলো অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছি। আরেকটি ব্যাপার হলো, যেখানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে আর কোনো বাধা নেই। তবে কিছু বিষয় থাকেই। প্রতিবন্ধকতা সব খানেই ছিল। আমাদের আইন সংশোধন নিয়ে বলব, কারও সন্দেহ করার কিছু নেই।’
এর আগে অনুষ্ঠানে তামাক আইন সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তার উপস্থাপনায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে কিছু বিষয় সংযোজন জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির ‘করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা’ (সিএসআর) কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তামাক নিয়ন্ত্রণে ফোরামের নানা সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন ফোরামের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নানা কার্যক্রম পালন করছে। তারই ধারাবাহিকতায় ফোরামের পক্ষ থেকে আমরা বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর ১৫২ জন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়েছি। আমি জানি, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল সে অনুযায়ী অনেকটা পথ এগিয়েছে। আমরা আশাবাদী প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমাদের এ উদ্যোগ পথে অনেকটা এগিয়ে নেবে।’
মন্তব্য