তামাক কোম্পানির প্রতারণা গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে তামাক কোম্পানিগুলো অপতৎপরতা ও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশ থেকে তামাক নির্মূল করতে গণমাধ্যমগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) আয়োজনে গতকাল রাজধানীর বিএমএ ভবনে তামাক নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমকর্মীদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে সম্মানিত অতিথি ছিলেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং দি ইউনিয়নের কারিগরী পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন। অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। মানসের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আবু রায়হান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও সংশ্লিষ্ট বিধি ও তামাক কোম্পানির কূটকৌশল ও চ্যালেঞ্জ-বিষয়ক প্রবন্ধে সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাকের কারণে বছরে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। স্বাস্থ্য খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকার অধিক অর্থ ব্যয় হয়। অথচ তামাক কোম্পানিগুলো প্রচার করে তারা সরকারকে প্রচুর রাজস্ব দেয়। প্রকৃতপক্ষে তামাকজাত দ্রব্যের ভোক্তারা যে ভ্যাট দেয়, সেই অর্থ নিজেদের প্রদত্ত ট্যাক্স বলে চালিয়ে আসছে। উপরন্তু কৌশলে সরকারকে কর ফাঁকি দিচ্ছে। তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি বন্ধ হলে দেশের সব হƒদরোগীর ফ্রি চিকিৎসা সম্ভব। কিশোর-তরুণদের নেশাগ্রস্ত করতে নাটক, সিনেমা ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো তামাকের আগ্রাসী প্রচারণা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, মানুষ গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কথা বিশ্বাস করে। সংবাদে ভালো-মন্দ দিক থাকে, এতে যদি সমাজের উপকার হওয়ার মতো সত্য তথ্য থাকে, সেগুলো ইতিবাচকভাবে নেয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ ঘোষণা বাস্তবায়নে বিদ্যমান আইন সংশোধন করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় নিয়ন্ত্রণ সেল এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাজ করছে। কার্যকরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকবিরোধী প্রচারণা জরুরি। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

শ্যামল দত্ত বলেন, তামাকের মতো ক্ষতিকর দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বৈধতা লক্ষ করা যায়। সাংবাদিকদের এ বিষয়ে কাজ করার আছে এবং তাদের সচেতন থাকতে হবে। অতীতে আমরা লাখ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন ফিরিয়ে দিয়েছি শুধু জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখে। কারণ তামাক কোম্পানিগুলো মানুষকে মারণনেশায় উদ্বুদ্ধ করতে এমন প্রচারণা চালায়। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো শক্তিশালী, কিন্তু দেশ ও মানুষের স্বার্থে সাংবাদিকদের অনেক কিছু করার আছে। এ রকম ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের জন্য সহায়ক হবে।

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, তামাক বহুমাত্রিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু তামাক কোম্পাানিগুলো নানাভাবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। দেখা যাচ্ছে, তামাক কোম্পানিগুলো প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী বিলম্ব করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। সাংবাদিকতার প্রধান কাজ সত্য প্রকাশ করা। তামাক কোম্পানিগুলোর অপতৎপরতা নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।

ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, তামাকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন বর্তমানে যে আশাব্যঞ্জক অবস্থানে এসেছে, সেখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি গণমাধ্যমে তামাকবিরোধী কার্যক্রম শুরু করি এবং সেটা অব্যাহত আছে। তামাকবিরোধী প্রচারণায় নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে গণমাধ্যমগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়া উচিত। মানস কর্তৃক এই অনুষ্ঠান ও সরবরাহকৃত তথ্যসমূহ সংবাদকর্মীদের তামাকের বিরুদ্ধে লিখতে সহায়ক হলে আয়োজন সার্থক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ড. অরূপরতন চৌধুরী।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০