তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না-কোনো তামাক ব্যবহার করেন। তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে মৃত্যুবরণ করেন এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ। তামাকের এ ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং আয়োজিত ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এ কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। আয়োজনে ফোরামের চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাতের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যারা সংসদ সদস্য, তাদের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বিষয়টি মনে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন; আমরা তাকে সহায়তা করব। এটা অর্জন করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গেই আছেন। তাই আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণের পক্ষে কাজ করতে হবে। তামাক আইন সংশোধনে সব পর্যায়ে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এগোতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হবে।’

বিশেষ অতিথি রুহুল হক বলেন, ‘আপনারা অনেকেই প্যাসিভ স্মোকিংয়ের কথা জানেন। একজন ধূমপান করেন, কিন্তু সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিশেষ করে তরুণ এবং নারীদের মধ্যে এটা বেশি হচ্ছে। আমাদের তামাকপণ্যের প্যাকেটে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা ৯০ শতাংশ করতেই হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আমরা সবাই বলেছি, তামাকের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি পরিকল্পনামন্ত্রীকে বলে রাখি, আমাদের দেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা জরুরি। আমরা সবাই এ ব্যাপারে একমত।’ তিনি বলেন, অনেক অবসরপ্রাপ্ত সচিব তামাক কোম্পানির বোর্ডে রয়েছেন। এ বিষয়টি কাম্য হতে পারে না। আমাদের আমলাতন্ত্র অনেক শক্তিশালী। তামাক নিয়ন্ত্রণে তাদেরও জোরালো ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।

অন্যান্য সংসদ সদস্যরা, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা ও তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় তামাকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনায় একমত পোষণ করেন।

এর আগে অনুষ্ঠানে তামাক আইন সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো উপস্থাপন করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বাংলাদেশের তামাক ব্যবহারের চিত্র তুলে ধরে বিদ্যমান তামাক আইনের কোন কোন বিষয়গুলো সংশোধন করা জরুরি, সে বিষয়গুলো উল্লেখ করেন। বিশেষ করে সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা ও মোড়কবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধি করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। পাশাপাশি, তার উপস্থাপনায় আন্তর্জাতিকভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণে সফল উদাহরণগুলোও উঠে আসে। তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক আইন সংশোধনের বিষয় তুলে ধরেন ফোরামের সাচিবিক সংস্থা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ।

তামাক নিয়ন্ত্রণে ফোরামের নানান সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত। এর মধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১৫৩ জন সংসদ সদস্যের স্মারকলিপি ও তামাক আইন সংশোধনের দাবিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে ১৫২ জন সংসদ সদস্যের চিঠি দেওয়া উল্লেখযোগ্য।

সভায় অন্য সংসদ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রুবিনা আক্তার, অপরাজিতা হক, শবনম জাহান, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী হোসেন আলী খোন্দকার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং তামাকবিরোধী সংস্থা, অন্যান্য এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০