ক্রীড়া প্রতিবেদক : বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান কেন বলা মুশফিকুর রহিমকে? গতকাল ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি তুলে ফের তা বুঝিয়েছেন তিনি। এদিন কি ছিল না তার ব্যাটে? মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের চারপাশে চোখ ধাঁধানো সব শট খেলেছেন। কখনও আবার সতীর্থের সঙ্গে গড়েছেন বড় জুটি। এ পথ ধরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় তিনি পেছনে ফেলেছেন তামিম ইকবালকে। শেষ পর্যন্ত মিস্টার ডিপেন্ডেবলের ব্যাটে ভর করে পাহাড়সম রান তুলে জিম্বাবুয়ের সামনে কঠিন লক্ষ্য ছুড়ে দেয় টিম টাইগার্স। জবাব দিতে নেমে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে সফরকারীরা। এর ফলে সিরিজের একমাত্র টেস্ট জয়ের পথে এগিয়ে গেছে মুমিনুল হকের দল।
প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ২৬৫ রানের জবাবে গতকাল শেষ বিকালে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ৫৬০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। পরে ৫ ওভার বল করার সুযোগ পেয়ে সফরকারীদের ৯ রানের মধ্যেই ২ উইকেট তুলে নেন নাঈম হাসান। তার মানে স্বাগতিকরা এখনও এগিয়ে ২৫৭ রানে। এর ফলে এ টেস্ট জয়ের গন্ধ পাচ্ছে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা।
গতকাল ক্যারিয়ারের তৃৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে শুরু থেকেই একবারে সাবলিল ছিলেন মুশফিকুর রহিম। যদিও রান তুলছিলেন ধীরে। কিন্তু ১৬০ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর এ ডানহাতি হাত খুলেন। তাই তো ডাবলে পৌঁছাতে তার বল লাগে ৩১৫ বল। ইনিংসে সব মিলিয়ে রয়েছে ২৮টি চারের মার।
বাংলাদেশের ইনিংস ঘোষণার সময় ২০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। ১৩০ ইনিংসে তার রান এখন ৪ হাজার ৪১৩। তামিম ১১৫ ইনিংস খেলে করেছেন চার হাজার ৪০৫ রান।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট শুরুর আগে মুশফিকের চেয়ে ১৫৪ রানে এগিয়ে ছিলেন তামিম। টেস্টের দ্বিতীয় দিনে এই ওপেনার আউট হন ৪১ রানে। মুশফিক উইকেটে যান পাঁচ নম্বরে। গতকাল ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির পথে তিনি পেরিয়ে যান তামিমের রান।
মুশফিকের আগে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি তুলে নেন মুমিনুল হক (১৩২)। এর সঙ্গে সঙ্গে এ বাঁহাতি সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিতে তামিম ইকবালের পাশে বসেছেন। ড্যাসিং ওপেনারকে পেছনে ফেলতে তার আর লাগে একটি সেঞ্চুরি।
মিরপুরের উইকেটে পেসাররা বাড়তি সহায়তা পেয়েছিল গত পরশু। কিন্তু গতকাল তেমন কিছুই দেখা যায়নি। তাই তো জিম্বাবুয়ের পেস অ্যাটাককে একবারে পাত্তায় দেননি মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল। চতুর্থ উইকেটে তারা ২২২ রান যোগ করেন। ঠিক সে সময়ে জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসের রান টপকে লিড নেয় বাংলাদেশ। এর মধ্যেই মুমিনুল ক্যারিয়ারের নবম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেন ১৫৬ বলে ১২ চারে। এরপরই এ বাঁহাতি ফিরেন সাজঘরে নিয়াউচি বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে। এদিকে বেশিক্ষণ টেকেননি মোহাম্মদ মিথুন। একই বোলারদের বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি। তবে মুশিকে যোগ্য সঙ্গ দেন লিটন দাস। পঞ্চম উইকেটে নেমে এ ডানহাতি সতীর্থের সঙ্গে গড়ে তোলেন ১১১ রানের জুটি। এর মধ্যে লিটনের অবদান ৫৩ রান। ঠিক তখনই সিকান্দার রাজার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে অহেতুক ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন লিটন।

লিটন ফিরে গেলেও রান তোলার গতি একটুও কমতে দেননি মুশফিক। তাইজুলকে সঙ্গে করে স্টাইক রোটেড করে একপর্যায়ে চার হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির আনন্দে মাতেন। এরপরই ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের চেয়ে ২৯৫ রানে এগিয়ে থেকে গতকাল বল হাতে দারুণ শুরু এনে দেন নাঈম হাসান। প্রথম ইনিংসে চার উইকেট পাওয়া এ স্পিনার দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীদের দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের পথে বেশ এগিয়ে দিয়েছেন। আজ সকালের সেশনেই হয়তো ক্রেইগ আরভিনের দলকে গুটিয়ে দিয়ে টাইগাররা ইনিংস ব্যবধানে জেতার আনন্দে মাতবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৬৫
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৪০/৩) ৫৬০/৬ ইনিংস ঘোষণা (মুমিনুল ১৩২, মুশফিক ২০৩*, মিথুন ১৭, লিটন ৫৩, তাইজুল ১৪*; টিরিপানো ৩০-৬-৯৬-১, নিয়াউচি ২৭-৩-৮৭-১, রাজা ৩০-১-১১১-১, টিশুমা ২৫-০-৮৫-১, এনডিলোভু ৪২-১-১৭০-২)
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: ৪ ওভারে ৯/২ (মাসভাউরে ০, কাসুজা ৮*, টিরিপানো ০, টেইলর ১*; নাঈম ৩-০-৪-২, তাইজুল ২-০-৫-০)