Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 6:56 pm

তারল্য সংকটে শেয়ার বিক্রিতে আগ্রহী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা

মো. আসাদুজ্জামান নূর: শেয়ার ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয় প্রবণতাই বেশি দেখা গেছে পুঁজিবাজারে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রয় শুরু করায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও সে পথে হাঁটেন। এতে বিক্রয় চাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে সিংহভাগ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর কমে যায়। পতন হয় সব সূচকের। কমে যায় বাজার মূলধনও।

বাজার বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীরা বলছেন, তারল্য সংকটে ভুগছে দেশের মুদ্রা বাজার। এর প্রভাব পড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ওপর। গত সপ্তাহে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রয়ে আগ্রহ বেশি দেখায়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ভড়কে যান। শুরু হয় প্যানিক সেল বা পতন আতঙ্কে শেয়ার বিক্রয়। এই বিক্রয় চাপ সামলাতে পারেনি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ফলে পতন হয় সব সূচকের।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সময়ে শুধু বহুজাতিক কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দাম নেতিবাচক ধারায় যায়নি। উল্টো বাজার মূলধন বেড়েছে এ খাতটির। এ খাতই সূচকের আরও পতন থেকে রক্ষায় ভূমিকা রাখে।

ডিএসইর গত ২৫ নভেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য জানা গেছে। প্যানিক সেলের কারণ হিসেবে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অর্থের জোগান দিতে শেয়ার বিক্রয় শুরু করেছিল। বাজার মূল্যে মুনাফায় থাকা শেয়ারগুলো বিক্রয় শুরু করে। এতে বাজারে শেয়ারের আধিক্য দেখা দেয়। এসব শেয়ারের একটি অংশ ইতোমধ্যে অস্বাভাবিকভাবে দর বৃদ্ধি হয়েছে।

ক্রেতা না থাকায় পতন হয় সূচক, শেয়ারের বাজার মূল্য ও বাজার মূলধনের। এতে একটি ছাড়া পতন হয় ডিএসইর ২০টি খাতের। আগের চেয়ে গত সপ্তাহে এসব খাতে লোকসান দেখেন বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ পতন হয় জীবন বিমা খাতে।

তবে পতনের এই বাজারেও আগের দুই সপ্তাহের মতো গত সপ্তাহেও লেনদেনে সর্বোচ্চ অবদান রেখেছে ব্যাংক খাত। এ খাতের শেয়ার হাতবদল হয়েছে সর্বোচ্চ। ডিএসইর তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে ব্যাংক খাতই সর্বোচ্চ ৩৮ শতাংশের বেশি লেনদেন করে ডিএসইর। নেতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন শেষ করলেও অন্যান্য খাতের শেয়ার তুলনামূলক লেনদেনে অবদান রাখে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয় ৩৮০টি সিকিউরিটিজের। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৪৯টির, কমেছে ৩১৩টির বা ৮১ শতাংশের ও অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির।

এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৩৯ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বা তিন দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ সময় সূচক দাঁড়ায় ছয় হাজার ৮৫২ দশমিক ০৯ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩৭ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ এক হাজার ৪৪২ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৯২ দশমিক ০৮ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬০২ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৬১ হাজার ৭৮ কোটি ৫৬ লাখ ১৭ হাজার ৫৬২ টাকায়। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮৭৮ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৪ হাজার ৯৮১ কোটি ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮৪ টাকা বা ২.৬৭ শতাংশ।

ডিএসইর সাপ্তাহিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইতে ছয় হাজার ৩০৬ কোটি ২৫ লাখ ৫ হাজার ১৭ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ছয় হাজার ৯৯২ কোটি ৬১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন ৬৮৬ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৭১ টাকা বা ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ কমেছে।

টাকার অঙ্কে সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় শীর্ষ দশ কোম্পানির অবদান ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে পাঁচটিই ব্যাংক খাতের কোম্পানি এবং লেনদেনে কোম্পানিগুলোর অবদান ২১ দশমিক ৮১ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওয়ান ব্যাংকের সাত দশমিক ৯৪ শতাংশ অবদান ছিল।