প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
২০১৬-এর মাঝামাঝি থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অনেকগুলো বিদেশি ব্যাংক দেশের বড় বড় কোম্পানিতে অর্থ সরবরাহ করছিল। তাদের সুদহারও ছিল অনেক কম। ফলে ঋণ নেওয়ার জন্য দেশীয় কোম্পানিগুলোর আগ্রহও বেশি ছিল বিদেশি ব্যাংকগুলোর প্রতি। কিন্তু হঠাৎ করে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এই বিদেশি ঋণটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে স্থানীয় কোম্পানিগুলো কোনো উপায় না দেখে ঋণের জন্য দেশীয় ব্যাংকগুলোর ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আর তখনই দেশের ব্যাংকগুলোতে অর্থের বড় সংকট শুরু হয়। আর এই সংকট ২০১৮ সালে এসে ব্যাপক আকার ধারণ করে। ওই সময়টিতে দেশের পুঁজিবাজারের গতিবিধিও ভালো ছিল। তাই এই তারল্য সংকট দূর করার জন্য আবারও বিদেশি ঋণটি চালু করা উচিত। এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেডের পরিচালক মো. মঈন উদ্দিন এবং আইআইডিএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের সিইও মো. সালেহ আহমেদ। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
মো. মঈন উদ্দিন বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট চলছে। যেখানে গত বছরেও এই খাতে ব্যাপক তারল্য ছিল। হঠাৎ করেই গত তিন-চার মাস ধরে এই খাতে তারল্য সংকটের কথা সবার মুখে বেশি শোনা যাচ্ছে। তিন-চার মাস আগেও এতটা সংকট জানা যায়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গত বছর প্রচুর তারল্য থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে কীভাবে এত তারল্য সংকটের সৃষ্টি হলো? এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, ফারমার্স ব্যাংকের কেলেঙ্কারির পর থেকেই তারল্য সংকটের সূত্রপাত। যে কারণে ব্যাংকগুলোর প্রতি জনগণের অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফারমার্স ব্যাংকে একটি বড় ডিপোজিট ছিল সরকারের একটি বড় ফান্ড। আর ওই ফান্ডটি যখন তুলতে যায় তখনই সংকটের সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, মানি মার্কেট ও শেয়ার মার্কেটের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও পরোক্ষভাবে আছে। ক্যাপিটাল মার্কেটে অর্থের প্রয়োজন হয় আর যখন ফান্ডেও ফ্লোটি আসে তখন ক্রেতার চাহিদা বাড়তে থাকে এবং ফান্ডের ফ্লো কমে গেলে চাহিদাও কমতে থাকে। আমাদের বাজারে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক খাতের ভূমিকা অনেক। ফলে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট থাকায় তারা আর বাজারে বিনিয়োগ করতে পারছে না। এখন বাজার অনেকটা সাধারণ ও ব্যক্তি বড় বিনিয়োগকারীদের ওপর নির্ভর করছে বলে মনে হচ্ছে।
মো. সালেহ আহমেদ বলেন, গত বছর ব্যাংক খাতে তারল্য প্রবাহ বেশি থাকার কারণ যদি আমরা লক্ষ করি তাহলে দেখা যাবে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি পর্যায় থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অনেক বিদেশি ব্যাংক দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোতে ফান্ডিং করছিল। তারা ভালোভাবেই ফান্ডিং করছিল এবং তাদের রেটও ছিল অনেক কম। সেখান থেকে অনেক কোম্পানি সিঙ্গেল ডিজিটে লোনও নিয়েছিল এবং সেটার সুদের হার ছিল তিন থেকে চার শতাংশের মধ্যে। ফলে ঋণ নেওয়ার জন্য দেশীয় কোম্পানিগুলোর আগ্রহও বেশি ছিল বিদেশি ব্যাংকগুলোর প্রতি। কিন্তু হঠাৎ করে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এই বিদেশি ঋণটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে স্থানীয় কোম্পানিগুলো কোনো উপায় না দেখে দেশীয় ব্যাংকগুলোর ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে ঋণের জন্য। আর তখনই দেশের ব্যাংকগুলোতে ফান্ডের বড় সংকট শুরু হয়ে গেল। আর এই সংকট ২০১৮ সালে এসে ব্যাপক আকার ধারণ করল, যা এখন পর্যন্তু চলছে। লক্ষ করলে দেখবেন, ওই সময়টিতে দেশের ক্যাপিটাল মার্কেটের ভালো গতিবিধিও ছিল। কাজেই হুটহাট কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে আগে-পিছের প্রভাব বিচার-বিশ্লেষণ করে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আমার মনে হয় এই তারল্য সংকট দূর করার জন্য আবারও বিদেশি ঋণটি চালু করা উচিত।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম