‘তারল্য সংকটে বাণিজ্যিক ব্যাংক: এক দিনে ২৪ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ধার দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক’ শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তাতে আমাদের ব্যাংক খাত সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
প্রতীয়মান হয়, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট গভীর হচ্ছে। এ কারণে দিন দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার সংকটে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ২৪ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ধার নিয়েছে। এটি এযাবৎকালের রেকর্ড। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা ধার নিয়েছে ব্যাংক খাত।
ব্যাংকগুলো যে তারল্য সংকটে আছে এবং তা ক্রমেই বাড়ছে, এটি ভালো লক্ষণ নয়। আমানতের ধীর প্রবৃদ্ধি, ঋণ আদায়ের ধীর গতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে বাজার থেকে বড় অঙ্কের টাকা উঠে আসছে। এসব কারণে তারল্য সংকট থাকতে পারে। কিন্তু এসব কারণে সংকট যে বাড়ছে এবং সংকট নিরসনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নিচ্ছেÑএসব খবর পুরোনো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া ব্যবস্থা অবস্থার উন্নয়নে যথেষ্ট নয়, এটি স্বীকার করতে হবে।
দেশের ব্যাংক খাত কয়েক বছর ধরেই তারল্যসংকটে ভুগছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের কৌশলই এ মুহূর্তে ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। অথচ প্রকট হয়েছে ব্যাংক খাতের তারল্যসংকট। কমেছে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল। বাস্তবতা হচ্ছে, যেসব ব্যাংক দুই-তিন বছর আগেও সাধারণ মানুষের আমানত রাখতে আগ্রহী ছিল না, সেসব ব্যাংকই এখন আমানত সংগ্রহে আগ্রাসী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এমন নয় যে তারল্যসংকট ব্যাংক খাত প্রথমবারের মতো মোকাবিলা করছে। গ্রাহকের আমানতই নয়, অন্যান্য খাত থেকেও ব্যাংকের আয় কমেছে। যেমনÑআমদানি ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে রপ্তানি ও প্রবাসী-আয় প্রত্যাশিতভাবে বাড়েনি। চাহিদার তুলনায় ডলারের সরবরাহ এখনও কম, যা তারল্যসংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ডলারের দাম বেড়ে গেলে অনেক পণ্যের দামও বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে জীবনযাত্রার ব্যয়ে। চলতি অর্থবছরের প্রথম থেকেই মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে সাধারণ মানুষের খরচ কমবে। তখনই সঞ্চয় করতে পারবেন তারা। প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষকে কীভাবে ব্যাংকসেবার আওতায় নিয়ে আসা যায়, সে পন্থা খুঁজতে হবে। বর্তমান সময়ে ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ তুলে নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা, গণমাধ্যমের এমন সংবাদে ব্যাংকের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থায় চিড় ধরে। নিম্ন আয়ের মানুষ এমনিতেই সঞ্চিত অর্থ জমা রাখার জন্য ব্যাংকের কথা চিন্তা করেন না। তারা নগদ অর্থ (হার্ড ক্যাশ) পকেট, পার্স ও ওয়ালেটে রাখেন, অথবা ঘরের সিন্দুকে ফেলে রাখেন। এসব মানুষের আস্থা অর্জন করতে হলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার চর্চা অতি জরুরি। মোটকথা, মানুষের আস্থা অর্জনকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাংকগুলোকে কতবার ধার দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এভাবে ধার দেয়া সাময়িক সময়ের সমাধান। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। তারল্যসংকট যাতে প্রকট না হয়, সে লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।