Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 11:13 am

তারল্য সুবিধা পাবে সংকটে পড়া ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংক খাত থেকে আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা বের করে বিভিন্নভাবে পাচার হয়েছে। তাই এসব ব্যাংক এখন তারল্য সংকটে ভুগছে। তারল্য সংকট সমাধানে ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তবে তা টাকা ছাপিয়ে নয়। আন্তঃব্যাংক মার্কেট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টর হয়ে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে তারল্য ব্যবস্থা করে দেবে। আমানতকারীরা আতঙ্কিত হবেন না। আমানতকারীদের স্বার্থ দেখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংকার্স সভা শেষে গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনুসর এসব কথা বলেন। গভর্নর বলেন, দেশের সাত-আটটি ব্যাংকের কারণে সব ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। আমানতকারীদের কথা ভেবে আমরা সীমিত পরিসরে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিতে চাই। দেশ থেকে আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রচুর টাকা পাচার হয়েছে। এতে এসব ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। সরকার আমানতকারীদের কথা ভেবে তাদের পাশে দাঁড়াবে। তবে তারল্য সংকট কাটাতে পুরো সাপোর্ট দিতে হলে দুই লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে এই সহায়তা করলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।

গভর্নর আরও বলেন, আমরা আমানতকারীদের অনুরোধ করব, আপনারা একসঙ্গে টাকা উত্তোলন করবেন না। আপনাদের প্রয়োজনমতো টাকা উত্তোলন করুন। আমাদের কিছুটা সময় দেন। আমরা আশা করি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে। একটা বিষয় পরিষ্কার করতে চাই, এই সাত থেকে আটটা ব্যাংকের কারণে পুরো ব্যাংক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলবে। দেশের ব্যাংক খাতের ওভারঅল কোনো সমস্যা নেই। ব্যাংক খাত সচল। এক ব্যাংকের টাকা অন্য ব্যাংকে গেছে।

তিনি বলেন, সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকের বোর্ড ভাঙা হয়েছে। ম্যানেজমেন্টও চেঞ্জ হবে। গুণগত মানও পরিবর্তন করা হবে। বোর্ডকে মাসে একবার মিটিং করার জন্য বসানো হয় না। নিয়মিত বোর্ড বসবে, সেজন্য বসানো হয়েছে। তারা পরিবর্তন লাগলে পরিবর্তন করবে। আশা করি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে। প্রতিটি ব্যাংকে গিয়ে অডিট করা হবে। পাশপাশি নতুন কার্যপ্রণালি কী হতে পারে, তা দেখা হবে। সেক্ষেত্রে কোনো ব্যাংক মার্জ বা রিকুইজশন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বড় ঋণখেলাপিদের ধরা হবে। তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ যত সম্পদ আছে, তা জব্দ করা হবে। দেশের বাইরে যা চলে গেছে, তা ফেরাতে বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। দেশের বেশিরভাগ অর্থ পাচার হয়েছে ব্রিটেন, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে। আন্তর্জাতিভাবেই এসব অর্থ ফেরানো হবে। তাই তাদের সহায়তা চেয়েছি।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাচারকারী একটি পরিবার ব্রিটেনে ৫০০ থেকে ৬০০ বাড়ি কিনেছেন বলে শুনেছি। সে বিষয়ে আমরা আরও বিস্তর কাজ করছি। এছাড়া যারা ব্যাংক লুট করেছে, আমরা তাদের দেশে থাকা সম্পদ থেকে দায় শোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এরপর তাদের বিদেশি সম্পদে আমরা হাত দেব।
ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধারে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে বলে জানান গভর্নর। আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংক খাত, কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালী করা এবং খেলাপিদের সম্পদ রিকভারি। এখানে দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞ লোক থাকবে। দু-তিন বছর সময় লাগবে ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধার করতে। আর স্থিতিশীল এক বছরের মধ্যেই হয়ে যাবে।

ইসলামী ব্যাংকে তারল্য সুবিধা দিতে ভুয়া ডলার ক্রয় দেখিয়ে অর্থ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর সঙ্গে সাবেক গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর ও নির্বাহী পরিচালক জড়িত ছিলেন। এ বিষয়ে পদক্ষেপের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামনের দিকে তাকাতে চাই। যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা প্রত্যাশিত নয়। এটা কোনোভাবে একটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য সম্মানজনক বিষয় নয়। এটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। তবে এটা এখন সমন্বয় করা হয়েছে।