Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 8:23 pm

তারেককে দেখার ইচ্ছাও নেই তথ্য সচিব মকবুলের

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’র ধারা ৪৫ অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেনকে। বিদায় নেয়ার আগে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন তিনি। জানান, বিএনপি ও সরকারবিরোধী কোনো কাজে তার কোনো রকম সম্পর্ক ছিল না। তিনি আরও জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সরাসরি কখনও দেখেননি এবং তাকে দেখার কোনো ইচ্ছেও তার নেই। যদি এমন কোনো কর্মকাণ্ডের কোনো তথ্য পাওয়া যায়, সেটি সাংবাদিকরা প্রচার করতে পারবেন।

গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকরা মকবুল হোসেনকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তিনি লন্ডনে গিয়ে কারও সঙ্গে বৈঠক করেছেন; এমন একটি কথা চাউর হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদায়ী তথ্য ও সম্প্রচার সচিব বলেন, আমরা লন্ডনে গিয়েছি গত মার্চে। আমরা একটা টিম নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের আশিকুন্নবী আছেন, আমাদের প্রেস। তাকে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

তারেক রহমানের তার যোগাযোগ তৈরি হয়েছে বলে যেসব কথা শোনা যাচ্ছে; তা নিয়ে প্রশ্ন করলে মকবুল হোসেন বলেন, একটা কথা আছে, হাতি যখন পাকে পড়ে, চামচিকাও লাথি মারে। আমি তারেক রহমানকে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে হয় না। তাকে দেখার ইচ্ছাও আমার নেই।

এ সময় যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো বস্তুনিষ্ঠ হলে প্রকাশ করার অনুরোধ করেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, যদি প্রমাণ হয় বিএনপির সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল; আমি যেখানেই থাকি আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে, সে বিএনপির লোকের সঙ্গে কানেকশন রাখবে, এটা হয় না। আমি জানি না কেন আমাকে অবসরে পাঠানো হলো! কিন্তু সরকারের এ রাইট আছে। এ বিষয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অতৃপ্তি দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেকটি মানুষ নিজেই সবচেয়ে বড় বিচারক। সুতরাং আমি সেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে সবসময় প্রস্তুত।

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কারণ কী হতে পারে এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে আপনার অনিয়মের বিষয়টি গণমাধ্যমের খবরে আছে জানিয়ে সচিব মকবুলকে প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে তিনি বলেন, আমার জানা মতে নেই। আমি যতদিন এখানে কাজ করেছি, সততার সঙ্গে করেছি, নিষ্ঠার সঙ্গে করেছি, সরকারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। আমার জ্ঞানের ভেতর নেই, আমার কোনো অপরাধ ছিল কি না বা কোন অপরাধের কারণে অবসরে দেয়া হয়েছে। যেহেতু এটি সরকার পারে, আইনের ভেতরেই পারে; সে জন্য এটি কার্যকর। আমি সরকারের প্রতি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল।

অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলার আছে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আপনারা সাংবাদিক হিসেবে অনুসন্ধান করতে পারেন। সরকারবিরোধী কোনো অ্যাক্টিভিটিজে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল কি না? যদি থেকে থাকে সেটি আপনারা প্রচার করতে পারেন, আমার পক্ষ থেকে কোনো অসুবিধা নেই।

এ ব্যাপারে নিজের বক্তব্য কীÑপ্রশ্ন করা হলে বাধ্যতামূলক অবসর পাওয়া সচিব বলেন, যোগাযোগ নিশ্চয়ই ছিল না। আমার আপন বড় ভাই আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। যদি ওখানকার এমপিকে জিজ্ঞেস করতেন, আমার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কি? তাহলে বেশি ভালো হতো। আমি হল ছাত্রলীগের সহসভাপতিও ছিলাম।

গত রোববার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে অবসর দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-এর ধারা ৪৫ অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

আইনের ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর যে কোনো সময় সরকার, জনস্বার্থে, প্রয়োজনীয় মনে করলে কোনো কারণ না দর্শিয়ে তাকে চাকরি থেকে অবসর দিতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, যে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হবে।

স্বাভাবিকভাবে আগামী বছরের (২০২৩ সাল) ২৫ অক্টোবর চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল মকবুল হোসেনের। কিন্তু শেষ হওয়ার আগেই তাকে অবসরে পাঠানো হলো।

২০২১ সালের ৩১ মে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন মকবুল হোসেন। এর আগে তিনি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরে রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।