তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে হাজির না হওয়ায় ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। খবর বিডিনিউজ।

৯ বছর ধরে পরিবার নিয়ে ব্রিটেনে অবস্থান করা তারেকের বিরুদ্ধে আরও কয়েক ডজন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। মুদ্রা পাচারের এক মামলায় তার সাত বছরের সাজার রায়ও হয়েছে গত বছর।

এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারকাজ চলছে বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে জজ আদালতের বিশেষ এজলাসে। মামলার আসামি সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও

ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ এদিন আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়াও এদিন আদালতে হাজির হননি। তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সময়ের আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করে খালেদার আত্মপক্ষ সমর্থনের জন?্য ৩০ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ঠিক করে দেন।

আইনজীবীদের বিচারক বলেছেন, ওইদিন খালেদা আদালতে হাজির না হলে তার জামিন বাতিল করা হবে। এছাড়া জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ২ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য রেখেছেন একই আদালত।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি করা হয়। তদন্ত শেষে দুদক ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

এর পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করে খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। আসামিদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান আছেন দেশের বাইরে। এছাড়া সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলা জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে আসা তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

খালেদা জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অন্য আসামিরা হলেন চারদলীয় জোট সরকার আমলে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তৎকালীন একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরের বছরের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু হয়। এ মামলায় মোট ৩২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আসামিদের মধ্যে জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন।

তারেকের বিরুদ্ধে পরোয়ানা ‘সরকারের ইচ্ছায়’: বিএনপি

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ‘সরকারের ইচ্ছা’য় হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ ?যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সরকার জিয়া পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ তথা সব বিভাগই এখন সরকারের ইচ্ছায় পরিচালিত হচ্ছে।’

‘দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন বলে আমরা মনে করি। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’

বৃহস্পতিবার ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে হাজির না হওয়ায় ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার এ আদেশ দেন।

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে রিজভী তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা হরতাল কর্মসূচি পালনে পুলিশের বাধা ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলার নিন্দা জানান।

তিনি বলেন, ‘রামপালে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির হরতাল চলাকালে প্রতিবাদী জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ এবং গুলিবর্ষণ করেছে। এ খবর সংগ্রহকালে দুজন সাংবাদিক পুলিশি নির্যাতনে শিকার হয়েছেন। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে এ পুলিশি পৈশাচিক নির্যাতনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুল করীম শাহিন, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০