Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 9:32 am

তালিকাভুক্তির ৫ বছরের মধ্যে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে ৬ কোম্পানি

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পরপরই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে অনেক কোম্পানির আর্থিক অবস্থা। শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না এসব কোম্পানি। বাধ্য হয়েই প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান হচ্ছে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে। মান বাঁচাতে কেউ নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়ে ক্যাটেগরি টিকিয়ে রাখছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে (২০১৩-২০১৭ সাল) তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ছয়টি কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। বাজারে আসতে না আসতেই কোম্পানিগুলোর অবস্থান হয়েছে জেড ক্যাটেগরিতে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মিউচুয়াল ফান্ড বাদে বিভিন্ন খাতের মোট ৫১টি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে ২০১৪ সালে। বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ সময় মোট ১৭টি কোম্পানির অনুমোদন দেয়। ২০১৫ সালেও ১৩টি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পায়। একইভাবে ২০১৩ সালে মোট অনুমোদন পায় ১৫টি কোম্পানির আইপিও। অন্যদিকে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বিএসইসি ছয়টি করে নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসার অনুমোদন দেয়।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্বল কোম্পানি এসেছে ২০১৪ সালে। এই সময় পুঁজিবাজারে আসা ১৭ কোম্পানির মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান জেড ক্যাটেগরিতে চলে যায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছেÑসুহƒদ ইন্ডাস্ট্রিজ, তুংহাই নিটিং, খুলনা প্রিন্টিং ও এমারাল্ড ওয়েল। আর ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে অভিষেক হওয়া সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স জেড ক্যাটেগরিতে চলে যায়। এছাড়া ২০১৫ সালে অনুমোদন পাওয়া সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল লভ্যাংশ না দিতে পারায় জেড ক্যাটেগরিতে চলে গেছে। তবে ২০১৬ ও ২০১৭ সালের কোনো কোম্পানি এখনও জেড ক্যাটেগরিতে যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তির কারণেই এমন অবস্থা হয়েছে। তাদের অভিমত, কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসার আগে তার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ভালো করে জেনে তারপরই তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম  শেয়ার বিজকে বলেন, কোম্পানিগুলো যখন বাজারে আসতে চায় তখন ইস্যু ম্যানেজার থেকে শুরু করে অডিটরসহ সংশ্লিষ্ট সবাই কোম্পানির আর্থিক অবস্থার একটি সুন্দর বিবরণ উপস্থান করে। বিএসইসির উচিত, এটা ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া। এছাড়া কোনো একটি সেক্টর যদি খারাপ করে তাহলে সংশ্লিষ্ট সেক্টরের কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তালিকাভুক্ত ১২টি কোম্পানি মাত্র এক বছরের লভ্যাংশ প্রদান করেছে। আরও সময় গড়ালেই এসব কোম্পানির আসল চিত্র জানা যাবে।

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার জন্য দায়ী মূলত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তারা। তারা বাজারে আসার কিছুদিন পরই শেয়ার বিক্রি করে দেয়। যে কারণে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হতে থাকে। বিএসইসির উচিত কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কমপক্ষে চার বছর পর্যন্ত কোনো পরিচালক শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন নাÑএমন নিয়ম করে দেওয়া। এদিকে বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলের শেয়ারে সর্বোচ্চ আট টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। তুংহাই নিটিংয়ের শেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকার মধ্যে। এছাড়া খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকা থেকে ১১ টাকা ৯০ পয়সার মধ্যে। এছাড়া এমারাল্ড অয়েলের শেয়ার ১৫ থেকে ১৬ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে।

অন্য দুই কোম্পানির মধ্যে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৩ টাকা ১০ পয়সা এবং সুহƒদ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার ১৭ টাকা থেকে ১৮ টাকা ২০ পয়সার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে।