তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট করহার আরও কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান এ প্রস্তাব দেন। এনবিআর সদস্য (শুল্কনীতি) মো. মাসুদ সাদিকের সভাপতিত্বে আলোচনায় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। এনবিআর সদস্য (ভ্যাটনীতি) জাকিয়া সুলতানা এবং সামসুদ্দিন আহমেদও (আয়করনীতি) উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট করহার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ করহারেও অনেক ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হচ্ছে না। অথচ বাজারে মৌলভিত্তি সম্পন্ন ভালো কোম্পানির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই বাজারে ভালো কোম্পানিকে আগ্রহী করে তুলতে করহার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করছি।’

তিনি বলেন, ‘এখন দেশে এমন অনেক কোম্পানি আছে, যারা ভালো ব্যবসা করেও কম কর দিচ্ছে। কীভাবে কম কর দেয়া যায়, তেমন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে।’ এমন পরিস্থিতিতে করের হার কমিয়ে এসব কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভুক্ত করা গেলে সরকারের রাজস্ব আরও বাড়বে বলে মত দেন ছায়েদুর।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়Ñএমন কোম্পানিকে এখন ৩০ শতাংশ হারে করপোরেট কর দিতে হয়, যেখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে বিদ্যমান করহার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করারও দাবি জানান ছায়েদুর রহমান।

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে এখন বৃহৎ কর ইউনিটের আওতায় কর দিতে হয় বলে তিনি হাতাশা প্রকাশ করেন। তার দাবি, কভিড মহামারির কারণে পুঁজিবাজারে ধীরগতি চলায় দেশের ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংকের পরিচালন খরচ টানাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য ও এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাম শাহীন বলেন, ২০১৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী দেশের সব লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পলিসি হোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স দিতে হচ্ছে।

এ কর বাতিল করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মুনাফার ওপর এ কর আরোপের ফলে দেশের সব লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গ্রাহক ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।’ এই কর প্রত্যাহার করা না হলে লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসার পরিধি প্রতিনিয়ত হ্রাস পাবে এবং কোম্পানিগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হবে বলে তার ভাষ্য।

এ খাতের করপোরেট কর কমানোর দাবি জানিয়ে ইমাম শাহীন বলেন, আয়কর আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত ব্যাংক, ইস্যুরেন্স এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ কর হার অনেক

বেশি। জীবন বীমার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ এবং জীবন বীমা নয়Ñএমন বিমার ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ করপোরেট কর ধার্য করা হোক।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট করহার ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেন।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) জিএম গোলাম ফারুক তার প্রস্তাবনায় বলেন, প্রস্তাবিত আয়কর আইন-২০২২-এ পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে কর দিলে ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তোলার বিধানটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, বিধানটি বলবৎ রাখা যেতে পারে। কারণ বিদ্যমান আইনের এ বিধান প্রস্তাবিত আয়কর আইনে অক্ষুণœ রাখা হলে বিভিন্ন শ্রেণির করদাতারা তাদের বৈধ উপায়ে উপার্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির সঙ্গে টাকা পাচারের ঝুঁকিও হ্রাস পাবে বলে মনে করি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০