নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি তিন বছর পর রপ্তানি নীতি প্রণয়ন করে থাকে সরকার। সবশেষ ২০১৮ সালে রপ্তানি নীতি প্রণয়ন করা হয়, যা ২০২১ সালেই শেষ হয়েছে। সেই হিসেবে ‘রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে শর্তসাপেক্ষে কাঁচা পাট ও কাঁচা চামড়া রপ্তানি করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি আংশিক প্রক্রিয়াকৃত তথা ওয়েট-ব্ল– চামড়াও রপ্তানি করা যাবে।
এদিকে রপ্তানির লক্ষ্য অর্জন ও রপ্তানি নীতি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনায় পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে খসড়া নীতিটি যাচাই-বাছাই করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে শিগগিরই নীতিটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত স্থানীয় শিল্পে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সমতা লেদারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকার নিশ্চয় আমাদের সঙ্গে আলোচনা করবে। আমরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানতে পারিনি। তবে এর আগে সরকার শর্তসাপেক্ষে ওয়েট ব্ল– ক্যাটেগরির চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল। বর্তমান বাস্তবতায় কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেয়া হলেও স্থানীয় শিল্প তেমন সমস্যায় পড়বে বলে মনে হয় না।’
খসড়া রপ্তানি নীতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালের নীতিমালায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতের সফটওয়্যার ও আইটি এনাবল সার্ভিসেস, আইসিটি পণ্য নতুন নীতিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সেবা খাত হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) ও ফ্রিল্যান্সিংও নতুন সংযোজিত হয়েছে অগ্রাধিকার সেবা খাত হিসেবে। আগে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত ছিল ১৩টি, এখন তা ১৪টি।
এদিকে রপ্তানি নিষিদ্ধের তালিকায় থাকা কাঁচা চামড়া এবারের নীতিমালায় শর্তসাপেক্ষে পণ্য রপ্তানি তালিকায় যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি ওয়েট-ব্ল– চামড়াও কেস টু কেস ভিত্তিতে রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে নীতিমালায়। এছাড়া কাঁচা পাটও শর্তসাপেক্ষে পণ্য রপ্তানি তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। আর আগের নীতিতে অধিক মূল্য সংযোজিত তৈরি পোশাক, ডেনিম ও গার্মেন্ট এক্সেসরিজ একটি খাত ছিল। এবার গার্মেন্টস এক্সেসরিজকে আলাদা খাত হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে।
কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেয়া হলে স্থানীয় চামড়াশিল্পে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমরা লক্ষ করছি, কোরবানির সময় কাঁচা চামড়ার বাজারে ধস নামে এবং এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত হওয়া সত্ত্বেও এ থেকে আমরা উপযুক্ত অর্থ আহরণ করতে পারছি না। অন্যদিকে চামড়াজাত যেসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়, সেগুলোও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে অনেক পিছিয়ে। তাই কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেয়া হলে এ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’ এতে স্থানীয় চামড়াশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে যে পরিমাণ উদ্বৃত্ত চামড়ার জোগান সৃষ্টি হয়, তাতে করে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেয়া হলে স্থানীয় শিল্প তেমন সমস্যায় পড়বে বলে মনে হয় না।’ অন্যদিকে কাঁচা পাট রপ্তানির সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করা উচিত বলে মনে করেন এ গবেষক।
বিশেষ উন্নয়নমূলক খাত থেকে বহুমুখী পাটজাত পণ্য ও নারকেল ছোবড়া বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন নীতিতে রিসাইকেল্ড পণ্যকে যুক্ত করা হয়েছে।
এর বাইরে রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪ খসড়ায় পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ধারাটি এবার নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ‘রপ্তানি-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’ নিয়মিতভাবে দেশের রপ্তানি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে। ‘রপ্তানি-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’র সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য গঠিত টাস্কফোর্স নিয়মিতভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি মনিটরিং ও মূল্যায়ন করবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ও শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪-এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য অতিরিক্ত সচিবের (রপ্তানি) সভাপতিত্বে ‘রপ্তানি নীতি মনিটরিং কমিটি’ গঠন করা হবে। কমিটি বছরে কমপক্ষে দুটি অগ্রগতি পর্যোলোচনা সভার আয়োজন করবে।
আসছে নতুন রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪
তালিকায় যুক্ত হচ্ছে কাঁচা পাট ও চামড়া
