তাড়াশ-চলনবিল অঞ্চলের খেজুর গুড় রফতানি হচ্ছে

আমন ধান কাটা শেষে খেজুরের রসে তৈরি শীতকালীন পিঠাপুলির উৎসব চলনবিল অঞ্চলের ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য চলছে শত বছর ধরে। পিঠাপুলি ঘিরে খেজুরের রসের গুড় উৎপাদন এখন বাণিজ্যিক রূপ পেয়েছে। বাড়ছে এর চাহিদা। এখানকার তৈরি গুড় রফতানিও হচ্ছে। পৌষ-মাঘের ভরা মৌসুমে এ গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন ব্যবসায়ীরা।

শীতকালীন পিঠাপুলি তৈরি ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উপহার হিসেবে চলনবিলের সুস্বাদু খেজুরের গুড়ের জুড়ি মেলা ভার। শীত মৌসুমে পিঠা তৈরিকে কেন্দ্র করে গ্রামের বাড়িগুলো আনন্দ-উৎসবে মুখর হয়ে ওঠে।

খেজুর গাছের যত্নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী গত দুবছর ধরে নিয়মিত খেজুর গাছ লাগানো হচ্ছে চলনবিল ও তাড়াশ উপজেলায়। গাছগুলো বড় হলে এ অঞ্চলে খেজুর রসের গুড়ের উৎপাদন আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছে তাড়াশ উপজেলা কৃষি অধিদফতর। এতে সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।

চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার প্রত্যন্ত দেশিগ্রাম, তালম, মাধাইনগর, ওয়াসিন, সগুনা এবং সদর ইউনিয়নের রাস্তা, বাড়ির আঙিনা ও জমিতে মাথা উঁচু করে সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার খেজুর গাছ। এসব জায়গায় প্রায় ২০০ হেক্টর জমির ওপর প্রায় এক লাখ ২০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। গাছ থেকে প্রতি বছর পাওয়া যায় এক হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন রস, যা দিয়ে তৈরি হয় এক হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন গুড়। ১০০ টাকা কেজি দরে এ গুড়ের বাজারদর প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা।

প্রতি বছর রাজশাহী ও নাটোর থেকে গাছিরা খেজুর রসের গুড় তৈরি করার জন্য ছুটে আসেন চলনবিল অঞ্চলে। রাজশাহী-নাটোরের গাছিদের পাশাপাশি স্থানীয় গাছিরাও অগ্রহায়ণ মাস থেকে খেজুর গাছ ইজারা নিয়ে গাছ পরিষ্কার, চুলা তৈরিসহ রস সংগ্রহের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেন। পৌষের প্রথম থেকে খেজুরের রস নামতে শুরু করলে ব্যস্ততা বেড়ে যায় তাদের। পৌষ-মাঘের প্রতিদিন দুপুর থেকে গাছে গাছে হাঁড়ি ঝুলিয়ে ভোররাতে সে হাঁড়ি নামিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর সে রস চুলায় জ্বাল করে পাটালি, দানা, ঝুড়াসহ নানা ধরনের সুস্বাদু গুড় তৈরি করা হয়। পরে তৈরি করা গুড় বিক্রির পর আবারও গাছে হাঁড়ি ঝুলিয়ে দিচ্ছেন গুড় ব্যবসায়ীরা। এভাবেই টানা দুই মাস ব্যস্ত সময় পার করেন তারা।

গাছি জয়নাল আবেদীন বলেন, দিন-রাত পরিবার-পরিজন নিয়ে যেভাবে পরিশ্রম করে গুড় তৈরি করি, তাতে ভালো লাভ হয়। গুড়ের চাহিদা বেড়েই চলেছে। দূরদূরান্ত মহাজনরা আসছেন গুড় কিনতে। মহাজনদের মাধ্যমে গুড় যাচ্ছে বিদেশে। তবে সরকারিভাবে গুড় রফতানির উদ্যোগ নেওয়া হলে আরও লাভবান হওয়া যাবে।

তাড়াশ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হক বলেন, খেজুরগাছ বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক নজরদারি বৃদ্ধি করে আঞ্চলিক ঐতিহ্য রক্ষায় সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান ঈমাম বলেন, দিন দিন এ অঞ্চলের খেজুর গুড়ের চাহিদা বেড়েই চলেছে।

 

শরীফ আহমদ ইন্না, সিরাজগঞ্জ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০