তিতাসের গ্যাস বিক্রির বকেয়া ছয় হাজার ৭০১ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ২০ মাসে তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ছয় লাখ দুই হাজার ৮৮৪টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, যার মোট দৈর্ঘ্য ৬৬৮ কিলোমিটার।

২৮ হাজার ৩৯৮টি অভিযান পরিচালনায় ব্যয় হয়েছে ছয় কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আদায় করা হয়েছে ৩১২ কোটি টাকার বেশি বিল এবং জরিমানা করা হয়েছে ৯১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

গতকাল সোমবার রাজধানীর তিতাস কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে গত মাস পর্যন্ত হিসাবের এসব তথ্য জানান কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্।

তিনি জানান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্যাস বিক্রি বাবদ তিতাসের বকেয়া রয়েছে ছয় হাজার ৭০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে এক হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঁচ হাজার ৪৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।

হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ বলেন, অবৈধ সংযোগের বিষয়ে আমরা অনেক অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা জনসংযোগ করেছি, বলেছি চুরি ঠেকাতে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের বলেছি, লাইন কেটে দেয়ার পর আবার লাইন বসলে সেই অঞ্চলের লাইন বন্ধ করে দেয়া হবে। এতে আমরা অনেক ভালো ফল পেয়েছি।

হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ বলেন, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে গত জুন পর্যন্ত ৩৩০টি মোবাইল কোর্টসহ ২৮ হাজার ৩৯৮টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে ৬৬৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার অবৈধ লাইন, অবৈধ সংযোগ ও বকেয়ার কারণে ছয় লাখ দুই হাজার ৮৮৪টি চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ মোট ছয় লাখ তিন হাজার ৯৭৫টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অবৈধ ব্যবহারের কারণে ২৫০টি শিল্প, ৩২৯টি বাণিজ্যিক, ৫৫ ক্যাপটিভ ও ১০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এসব অভিযানের মাধ্যমে ৩২১ কোটি ৮১ লাখ টাকা অতিরিক্ত বিল এবং ৯১ কোটি ২৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত বিল বাবদ ১৪৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৩৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে দুই হাজার ৩৮৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা বকেয়া ছিল, এক হাজার ৫২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। এখন বকেয়ার পরিমাণ কমে এক হাজার ৬৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। বেসরকারি খাতে ৩১ হাজার ১৫৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বকেয়া ছিল, এখন পাঁচ হাজার ৪৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অভিযানে বাধা দেয় জনগণ, কোনো সংসদ সদস্য-মন্ত্রী আমাদের অসহযোগিতা করেননি। জনগণ প্রথমবার বিরোধিতা করে, দ্বিতীয়বার যখন গিয়েছি আর সমস্যা হয়নি।

জনশ্রুতি রয়েছে তিতাসের লোকজন এসব অবৈধ সংযোগ বাণিজ্যে জড়িতÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন রেকর্ড নেই, সব কাজ করে ঠিকাদার। কিছু অভিযোগ সত্য, তবে বাইরের লোকজন বেশি অপকর্ম করছে। অভিযোগের কারণে তিতাসের লোকজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমার বিভিন্ন সময়ে আটজনকে বরখাস্ত করেছি, ১৬ জনকে সাময়িক বরখাস্তসহ ২২৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ৯১ জনকে শাস্তিমূলকভাবে বদলি করেছি। তিন হাজারের বেশি স্টাফের মধ্যে হয়তো নগণ্য পরিমাণে জড়িত থাকতে পারে। ৫০ থেকে ৬০ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বিচ্ছিন্ন করার পর আবার সংযোগ দেয়া প্রসঙ্গে হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ বলেন, কিছু সংযোগ হয়তো লাগতে পারে। তবে নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রিপেইড মিটার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিটার নিলে আমাদের লাভ, বকেয়া থাকে না, অগ্রিম বিল পাচ্ছি।

তিতাস গ্যাসের সিস্টেম লস নিয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমরা জোনগুলোয় মিটার বসিয়েছি, এখনও আলাদা করতে পারিনি। পরবর্তীকালে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে অবগত করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০